‘শীতে টান পড়েছে রোজগারে’
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ জানুয়ারি ২০২৩, ৭:৩৫ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
কয়েকদিন ধরে মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে চলছে শীতের দাপট। প্রচণ্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। কনকনে শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশা। দিনের অর্ধেক সময় দেখা মিলছে না সূর্যের।
এই তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষ। যার প্রভাব পড়েছে প্রান্তিক জনপদ থেকে নগরজীবনে। সংসার চালানোর মতো আয়-রোজগারও হচ্ছে না শীতের প্রকোপে।
রোববার (৮ জানুয়ারি) জেলার শ্রীমঙ্গলে ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, তাপমাত্রা নিচে নামার কারণে শ্রীমঙ্গলে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। রেকর্ড অনুযায়ী আগামীতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে।
এদিকে শীতের তীব্রতায় জবুথবু জেলায় বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। জেলা শহরের চাঁদনীঘাট এলাকার ফয়সাল ইসলাম (৫২) জীবিকা নির্বাহ করেন রিকশা চালিয়ে। কনকনে শীতে টান পড়েছে তার রোজগারে। ৬ জনের সংসারের প্রতিদিন খরচ মেটাতে তার প্রয়োজন অন্তত তিনশ টাকা। সেখানে গতকাল শনিবার আয় করেছেন ২৫০ টাকা। আর আজ রোববার সকাল দশটা পর্যন্ত আয় মাত্র ৩০ টাকা।
তিনি বলেন, কনকনে ঠাণ্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে যায়। বেলা ১০টার আগে রিকশার হ্যান্ডেল ঠিকমতো ধরতেই পারি না। তাছাড়া রাস্তায় মানুষ কম। তাই আয়ও কম হচ্ছে।’
শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। শীতের সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় টিকতে পারছে না খেত খামারে।
রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের শংকর দাস বলেন, এই শীতে খেতে কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। কাজ না করলে তো সংসারের খরচ চলবে কেমনে। কয়েকদিন ধরে বড় কষ্টে আছি।
এদিকে শীতের তীব্রতায় জেলায় বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ জন, এআরআইয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। গত এক সপ্তাহে শীতকালীন রোগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩৫ জন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ে হাসপাতালে। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা। অন্যান্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোর এবং ইনডোরে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিশ্বজিৎ দেব বলেন, শীতের প্রভাবে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রার্দূভাব বাড়ার সাথে রোগীর চাপ বাড়ছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
এদিকে জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে জেলার ৬৭ ইউনিয়ন ও পাঁচ পৌরসভায় ৩৫ হাজার ২৮০টি কম্বল পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৪৯০টি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, তীব্র শীতে শীতার্ত মানুষের মাঝে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিতে জেলা প্রশাসনের কম্বল বিতরণ অব্যাহত থাকবে।