মৌলভীবাজারে এক সাপ্তাহে ছয়শো মানুষ ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ জানুয়ারি ২০২৩, ৮:২৭ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারে মৌসুমের শুরুতেই জেঁকে বসেছে শীত। গত কয়েক দিনের শীতের তীব্রতায় নাজেহাল মানুষজন। দেখা দিয়েছে ঠান্ডা জনিত রোগের প্রার্দূভাব। এতে বেশিরভাগ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
সরেজমিনে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালের আন্তঃ ও বহির্বিভাগে ঠান্ডার প্রকোপে নানান বয়সী রোগীর চাপ বেড়েছে। ঠান্ডার প্রকোপে শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন হাসপাতালে।
ঘন-কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে। নির্দিষ্ট পরিমান বেডের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা।
হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, প্রাথমিক চিকিৎসা সহ প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেই বাড়তে শুরু করে রোগীর চাপ।
এদিকে নির্দিষ্ট বেডের বিপরীতে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, বিনামুল্য ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।
চার বৎসরের শিশু পুষ্পা ১০ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। লংলা চা বাগান থেকে আসা শিশুর মা চম্পা কুর্মি বলেন, আমার শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত ছিল, তাকে নিয়ে হাসপাতালে আছি দশদিন হল। এখন সে অনেকটা সুস্থ। আজ বাড়ি ফিরবো।
সদর উপজেলার রুমা বেগম বলেন, শীতের কারণে হঠাৎ জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হলে আমার বাচ্চাকে নিয়ে আসি গতকাল সকালে, চিকিৎসা পেয়ে এখন আমার বাচ্চা সুস্থ।
অনেক ওষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়েছে জানিয়ে রাজনগর থেকে আসা অভিভাবক ময়নুল ইসলাম বলেন, আমার বাচ্চার ঠান্ডা লেগে হঠাৎ কিচুনি দেখা দেয় সাথে সাথে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। দুদিন ধরে আছি। হাসপাতালে সব ওষুধ পাইনি, অনেক ঔষুধ বাহির থেকে কিনতে হয়েছে।
দায়িত্বরত নার্স জানান, শীতজনিত রোগের প্রাদূর্ভাব বাড়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীদের সংখ্যা। শিশু ওয়ার্ডে ৫০টি বেডের বিপরীতে ৮০ জনের এর অধিক রোগী রয়েছেন।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় শীতকালীন রোগের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ জন, এআরআইয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ জন। গত এক সপ্তাহে শীতকালীন রোগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬ শত জন।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিশ্বজিৎ দেব বলেন, শীতের প্রভাবে ঠান্ডা জনিত রোগের প্রার্দূভাব বাড়ার সাথে রোগীর চাপ বাড়ছে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই দিনে দিনে আবার কেউ কেউ এক দুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে শিশুদের সুরক্ষা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে খালি পায়ে না হাটা, বাইরে কম বের হওয়া, ঠান্ডা বাতাস না লাগানো, বিশুদ্ধ হালকা উষ্ণ গরম পানি খাওয়া ও গোসল করা, গরম কাপড় ব্যবহার করা সহ অপুষ্টিজনিত শিশুদের তাপযুক্ত স্থানে রাখা সহ অভিবাবকদের সচেতন থাকতে হবে।