কমলগঞ্জে অরক্ষিত পাঁচ বধ্যভূমি
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:৪৮ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার স্বীকৃত ছয়টি বধ্যভূমির মধ্যে একটিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও স্থানীয় আরও পাঁচটি বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ এবং স্মৃতিসৌধ নির্মাণে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাসের অমর সাক্ষী এই বধ্যভূমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিণত হয়েছে ঝোপঝাড়ে ভরা জংলায়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা সারাদেশের মতো কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি স্থানে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজনকে ধরে এনে হত্যার পর মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল এসব বধ্যভূমিতে।
১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সরকার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল মৌলভীবাজার জেলায় অনুসন্ধান চালিয়ে আটটি বধ্যভূমি চিহ্নিত করে। এর মধ্যে কমলগঞ্জের শমশেরনগরের ৭১-এর বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করার পর সংস্কার ও সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে শমশেরনগরে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও এ উপজেলার দেওড়াছড়া, প্রতাপী, চৈত্রঘাট, ছয়ছিরি ও আদিয়া বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত ও বাছাই করা এবং ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বাসিন্দাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, উল্লিখিত এ স্থানগুলোতে বাঙালিদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর গণকবর দেওয়া হয়। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা চালানো হয়েছিল দেওড়াছড়ায়। এক দিনেই সেখানে গণহত্যার শিকার হয়েছিলেন অন্তত ৭০ জন চা শ্রমিক।
জানা যায়, বছর কয়েক আগে কমলগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুলের উদ্যোগে এবং দেওড়াছড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এ বধ্যভূমিটি চিহ্নিত করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে সে স্থানটি সংরক্ষণের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে সেখানে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক টানানো হয়।
উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ধলাই নদীর পাশে পাত্রখোলা বধ্যভূমি। এখনও সেখানে রয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের নির্মিত তৎকালীন একটি বাংকারের অংশবিশেষ। ধলাই ভ্যালি ক্লাবের বর্তমান গ্যারেজ ও বাংলোটি ছিল হানাদারদের নির্যাতন কেন্দ্র। বাংলো থেকে কয়েকশ গজ দূরেই এই বধ্যভূমিটি। চিহ্নিত করে এই স্থানটি সংরক্ষণ না করায় সেখানে এখন গড়ে উঠেছে পাত্রলা চা বাগান। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়রা।
একইভাবে সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে চৈত্রঘাট, প্রতাপী, ছয়ছিরি ও আদিয়া বধ্যভূমি। স্থানীয়দের জানান, শমশেরনগর বিমানবন্দরসহ এসব স্থানের মাটি খুঁড়লে এখনও শতাধিক কঙ্কাল পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে ইউএনও সিফাত উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে এ উপজেলার অরক্ষিত বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিতকরণ, সংস্কার, সংরক্ষণ ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুর রহমান জানান, বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য স্মারক হিসেবে প্রতিটি বধ্যভূমি সংরক্ষণে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আবেদন করা হবে।
সূত্র: সমকাল।