পেশা হিসেবে ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন ডিজাইনার কেমন?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১:০৪ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
ফ্যাশন ডিজাইন এমন একটি শিল্প মাধ্যম যার সাহায্যে একজন ডিজাইনার তার নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একটি পোশাককে আকর্ষণীয় করে তুলেন। এ ছাড়া তার ধৈর্য এবং সৃজনশীলতার পরিচয় দেন তার তৈরি বা ডিজাইন করা পোশাকে।
তাই আপনি যদি সৃজনশীল ও নতুনত্ব কিছু করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন ভাবছেন, তবে ক্যারিয়ার হিসেবে এই পেশাটি আপনার জন্য। এতে করে আপনি আপনার সৃজনশীলতা ও একাগ্রতা দিয়ে বিশ্ববাজারে গার্মেন্টস শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে পারবেন।
এতে দেশে আরও বেশি করে রফতানি খাতে আয় বাড়বে। আর আপনি হবেন একজন প্রতিষ্ঠিত।
জানা গেছে, বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইনিং একটি জনপ্রিয় পেশা। ইতিমধ্যে পোশাক শিল্পে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। দেশজুড়ে হাজার হাজার বুটিক্স হাউজ, গার্মেন্টস, বায়িং হাউজ, ফ্যাশন হাউজ গড়ে উঠার ফলে এ সব খাতে দক্ষ জনবলের চাহিদা তৈরি হচ্ছে।
আর বুটিক্স হাউজ, গার্মেন্টস শিল্প, বায়িং হাউজ, ফ্যাশন হাউজ সব জায়গায়তে এখন ফ্যাশন ডিজাইনার থাকা বাধ্যতামূলক। তাই গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানে ফ্যাশন ডিজাইন ও অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে ডিগ্রি নেয়া শিক্ষার্থীদের পাস করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরুবা কালার বুটিক্স হাউজের একজন ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন ডিজাইনার নিগার সুলতানা বলেন, ফ্যাশন ডিজাইন বিষয় নিয়ে পড়লে যে কেউ নিজ উদ্যোগে ফ্যাশন হাউজ, বুটিক হাউজের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। দেশের বাইরেও কাজের সুযোগ আছে।
পাশাপাশি দেশের জন্য কাজ করতে চাইলে যে কোনো ফ্যাশন হাউজ বা গার্মেন্টস কোম্পানিতে কাজ করা যাবে। যেমনটা আমিও করছি। তিনি বলেন, এই সেক্টরে কাজ করলে বেতন অন্যান্য পেশার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে।
আর এ পেশায় কাজের অনেক স্বাধীনতা রয়েছে। কারণ প্রত্যেকটি ডিজাইনারকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়।
কারণ হিসেবে নিগার বলেন, মানসিকভাবে ঠিক না থাকলে কাজ করা সম্ভব না।
সংসার জীবিনের সব কিছুর কাজের ক্লান্তির পর ও আমি করছি আমার সপ্নের ডিজাইন।
কেন হবেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার
ক্রিয়েটিভ ফ্যাশন ডিজাইনার নিগার সুলতানা বলেন, আপনার মনে রাখতে হবে, যে পোশাকটি আপনি বানাবেন সেটা ভোক্তার পছন্দ হতে হবে। এ জন্য আপনি আপনার চোখ ও মগজ দিয়ে একজন ভোক্তার মতো চিন্তাশক্তি থাকতে হবে।
এ সেক্টরে কাজ করতে হলে আপনার কাপড় নিয়ে গবেষণা করতে হবে। তাই অন্যের জন্য মার্জিত নতুন কিছু সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে আধুনিকতার দিক দিয়ে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে পারবেন। এ ছাড়া এই সেক্টরে ভালো আয় ও বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ থাকায় নিজেকে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে গড়ে তুলতেই পারেন
কাজের ক্ষেত্র
খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে ফ্যাশন ডিজাইনারদের রয়েছে চাকরির বিশাল বাজার। এর মধ্যে টেক্সটাইল শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প, বায়িং হাউস, বুটিক হাউস বা দেশের বড় বড় দেশি ও বিদেশি পোশাক ব্র্যান্ড হাউসে আপনার কাজের অনেক সম্ভাবনা নিশ্চিৎ থাকবেই।
এ ছাড়া উচ্চজ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি চাইলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদেও আপনি আপনার পদ চিহ্ন রাখতে পারবেন।
কাজ পেতে হলে আপনার যে যোগ্যতা লাগবে
নিগার সুলতানা বলেন- এই সেক্টরে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়ে ডিপ্লোমা, অনার্স বা আরও উচ্চসম্মান বা উচ্চতর ডিগ্রি থাকতে হবে। এ ছাড়া এই বিষয়ে ডিপ্লোমা করেও আপনি আপনার কাঙ্খিত চাকরিটি পেতে পারেন।
কারণ ফ্যাশন ডিজাইনিং শুধু পাশাক ডিজাইন করা নয়, পোশাকের ফ্যাব্রিক, বুনন, কাপড়ের গুণাবলি, উপাদান, রং, নকশা এবং পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হয়। তাই এই বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।
একজন ফ্যাশন ডিজাইনার কী কাজ করে
এক কথায় বলতে গেলে ধরাবাধা কোন কাজ নেই তাদের। একটি পোশাক ভোক্তার পছন্দসই করে ডিজাইন ও বাজারজাত করাই ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাজ। তাই একজন ফ্যাশন ডিজাইনারকে মাথা ঠান্ডা করে বর্তমান ট্রেন্ড কে মাথায় রেখে অনেক গবেষণা করতে হয়।
সে কোন দেশের ভোক্তাদের পোশাক নিয়ে কাজ করছে তার ওপর চিন্তা করতে হয়। কারণ ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের যে ধরনের পোশাক ব্যবহৃত হয় সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়।
এ ছাড়া দেশভিত্তিক আবহাওয়া অনুযায়ী কাপড় তৈরি ও ডিজাইন করতে হয়। কারণ সব দেশের পোশাক এক হয় না। আবহাওয়া, সংস্কৃতি, উৎসব অনুযায়ী কাপড়ে ডিজাইন করতে হয়।
এ পেশায় সুযোগ-সুবিধা
ফ্যাশন ডিজাইন সেক্টরে কাজ করলে দেশি-বিদেশে বড় বড় এক্সপো বা মেলায় অংশগ্রহণ করা যায়। তাছাড়া ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। অন্য দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব কাছ থেকে জানা যায়।
কাজের প্রতি পরিশ্রমী হলে খুব সহজেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এখানে নারী-পুরুষ সমান তালমিলিয়ে কাজ করে।
মাস শেষে আয় কেমন হতে পারে
ফ্যাশন ডিজাইনার নিগার সুলতানা বলেন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ইন্টার্নশিপ করা অবস্থায় একজন ডিজাইনার ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা সম্মানি পায়। ইন্টার্ন করার ৩ মাস বা ৬ মাস পর যে কোন ব্র্যান্ড কোম্পানিতে চাকরি করার প্রথম অবস্থায় প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পেয়ে থাকে।
তারপর ক্রমশ বেতন বাড়তে থাকে যা সর্বোচ্চ ৯০ হাজার পর্যন্ত হয়। এ ছাড়া আরও ভালো বেতন পাওয়া কোম্পানির উপর নির্ভর করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক কোনো কোম্পানির সঙ্গে কাজ করলে মাস শেষে সহজেই আয় করতে পারবেন দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকা।
তিনি বলেন, এই সেক্টরে কাজে অভিজ্ঞতার চেয়ে কাজের প্রতি নিষ্ঠাবানদের গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়।
ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হলে এ বিষয়ে কোথায় পড়বেন
১.ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন,ধানমন্ডী, ২. বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সটাইল। ৩. বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অফ ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলোজি (BUFT)। ৪. শান্ত-মরিয়াম ইউনিভার্সিটি অফ ক্রিয়েটিভ টেকনোলোজি (SMUCT)। ৫. ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজি। ৬. উত্তরা ইউনিভার্সিটি। ৭. ঢাকা ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন সংস্থায় ছয় মাস বা এক বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। অন্যদিকে উচ্চডিগ্রির ক্ষেত্রে রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, অ্যাপারেল ম্যানুফেকচার অ্যান্ড টেকনোলজি, নিটওয়ার ম্যানুফেকচার অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়গুলোর উপর অনার্স এবং এমবিএ ইন অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং নিয়ে পড়া যেতে পারে।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ওমর ফারুক নাঈম