শত বছর ধরে হাওরের বুকে সবুজ ছাতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:১৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
শত শত বছর ধরে হাওরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। রোদ ঝড় বৃষ্টি সবকিছু মাড়িয়ে টিকে আছে এখনো। শত বছর আগের চৈত্র মাসের এক দুপুর একজন কৃষক ছায়ার আশায় গাছটি রোপন করেছিলেন। আজ এই গাছই এখন কৃষকদের ছায়া বৃক্ষ।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়নের কাগজি বাড়ি নামের জায়গাটিতে সবুজ ছাতার মতো গাছটি এখনো দাঁড়ানো। এখানে কোনো এক সময় হয়তো বাড়ি ছিল। আরও গাছ ছিল। এখন আর বাড়ি নেই। অন্য সঙ্গী-সাথিদের হারিয়ে শুধু এই দুটো গাছ টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
স্থানীয়রা জানান, কাউয়াদীঘি হাওরের বুকে শত বছর আগে লাঙল দিয়ে আমনের জমিতে চাষ দিচ্ছিলেন অল্প বয়সী এক কৃষক। সারা শরীর তাঁর রোদে পুড়ছে। একটুখানি ছায়া খুঁজছিলেন, কিন্তু কোথাও এক টুকরা ছায়াও নেই। না আছে আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ, না আছে কোনো গাছ। সে রকম মুহূর্তে যুবক কৃষকটি মনে মনে ঠিক করলেন, এই খোলা প্রান্তরে গাছ রোপণ করতে হবে। সেই গাছের ছায়ায় বসে একটুখানি জিরিয়ে নেবেন হালচষা কৃষক, বিলে-ঝিলে থাকা মাছধরা জেলে, গরু-মোষ চরানো রাখাল। একদিন আমগাছের কয়েকটি চারা পুঁতে দিলেন একচিলতে উঁচু ভিটায়। তাঁর পুঁতে দেওয়া গাছের চারাগুলো হাওরের ঝোড়ো বাতাসকে বুকে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াল।
শনিবার বিকেলে কাউয়াদিঘি হাওরের কাগজি বাড়িতে যাওয়ার পথে গ্রামের মধ্যে বেশ কয়েকজন মানুষের সঙ্গে দেখা। বলতে থাকেন গাছটির জন্মের কথা। একাটুনা ইউনিয়নের হাতিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি এই আমগাছগুলো রোপণ করেছিলেন। মূলত এই স্থানটিতে কোনো গাছ ছিল না। যাঁরা কৃষিকাজ করতেন, মাছ ধরতেন, গরু-মহিষ চরাতেন, তাঁরা যাতে প্রখর রোদের সময় গাছের নিচে বসে একটু ছায়া পান, বিশ্রাম নিতে পারে এটাই ছিল তাঁর ইচ্ছা। হাতিম মিয়া প্রায় ১০০ বছর বয়সে মারা গেছেন। তা-ও প্রায় ৩০ বছর আগে।
গ্রামের কৃষক আলমগির বলেন, শত শত বছর আগে জমি চাষ করতে গিয়ে রোদে ধরেছিলে কৃষক হাতিম মিয়ার। কোনো ছায়া ছিল না। তাই এই গাছ রোপণ করেন। আজ এই গাছের নিচে বসে এখন আমরা ছায়া পাই। আমাদের ছাতা হিসেবে কাজ করে। গাছটি এখনো সজীব প্রাণ। প্রতিবছরই আম ধরে।
এখন গাছের আশপাশে এখন শূন্য হাওর। হাওরের বুকে জল শুকিয়েছে। কৃষকরা ধান কেটে এই গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন।।বাতাস এলে গাছের পাতা মৃদু কোলাহলে নীরবতা ভাঙছে। সন্ধ্যা নামতেই ঝাকে ঝাকে আসে পাখিদের দল। এভাবেই শত শত বছর ধরে মানুষকে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে গাছটি।
হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, এখানে যারা বিশ্রাম নেন, তারা শুধু ছায়ার সুখই পান না। আম ফলও খেতে পারেন। এ এক অন্য রকমের শান্তি ও স্বস্তি। এখানে হয়তো কেউ ফেলে আসা সময়ের পাঠ্য কিছু লিখে রাখেনি। দিগন্তের কাছে একলা দাঁড়ানো গাছ দুটোই শত বছরকে ধরে আছে নীরবে। গাছের বিভিন্ন অংশ পচন ধরেছে।যেদি পরিবেশ সংশ্লীষ্টরা এদিকে নজর দেন তবে গাছটিকে রক্ষা করা যাবে। নয়তো হঠাৎ ভেঙে পড়ে যাবে।