অন্ধ চা শ্রমিক সন্তান হরিবল পেলো জিপিএ ৫
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ৩:০৫ অপরাহ্ণ
হরিবল বোনার্জির (১৭) এর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগানে। মা বিশখা বোনাজি ও বাবা অনিল বোনার্জি দুজনের চা বাগানের শ্রমিক। প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু হয় এনজিও ব্রাক এর স্কুল থেকে। সেখান থেকে ভাল ফলাফলে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের পাশেই মৌলভীবাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসের আবাসিক হোষ্টেলে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যায় সে।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে সাথে কথা হয় হরিবল বোনার্জির। তিনি বলেন, আমি যে পড়ালেখা করে এতদূর এগিয়ে আসতে পারবো সেটা কখনো ভাবতেই পারি নি। আমরা পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠির লোক। ব্যাকের স্কুলে থেকে আমি পিএসসি পরীক্ষা দেই। জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করি। এরপর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ জন্মে যায়। ভর্তি হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে সমাজসেবা অফিসের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের পিছিয়ে পরা চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে টিউশনিও পড়িয়েছি। করোনাকালীন সময়ে যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন আমার গ্রামের শিক্ষার্থীদের একসাথে নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।
তিনি বলেন, পড়ালেখার জন্য আসলে দিনে একটানা দশ ঘন্টা পড়তে হয় না। মনযোগ দিয়ে কয়েকঘন্টা পড়লেই হয়। পরীক্ষার হলেও আমার অন্যান্য সাধারণ ছাত্রদের সাথে পরীক্ষা দিয়েছি। শুধুমাত্র আমি সহযোগি হিসেবে অষ্টম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। আমি বলে বলে দিয়েছি আর সে লিখে লিখে দিয়েছে। আমার স্বপ্ন ছিল একজন গায়ক হওয়া। অনেকটা পথও এগিয়েছিলাম। কিন্তু আর গায়ক হয়ে উঠা হয়নি। এখন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষক হতে চাই।
হরিবল বোনার্জি তার এই সফলতার জন্য সকল শিক্ষক, মা-বাবা, সমাজসেবা অফিসের রিসোর্স শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষকগণ ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সহযোগিকে উৎসর্গ করতে চান। ভবিষৎ জীবনে সফল হওয়ার জন্য সে সকলের কাছে আশির্বাদ চায়।