মৌলভীবাজারে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়
আওয়ামীলীগ নেতাদের নৌকা উপহার দেয়া সেই জাহানারা এখন জেলা মহিলাদলের সম্পাদক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ৩:৫০ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাদের ফুলের নৌকা উপহার দেয়া মৌলভীবাজার পৌরসভার ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহানারা বেগম জেলা মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। এনিয়ে জেলাজুড়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এঘটনায় ভোটাধিকার,গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন সংগ্রামে রাজ পথে আন্দোলন সংগ্রামেথাকা বিএনপি ঘরনার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের জেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত নারীকে মনোনীত করায় বিষ্ময় প্রকাশ করেন।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গেল ১ নভেম্বর ডাঃ দিলশাদ পারভীনকে সভাপতি ও জাহানারা বেগমকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয়তাবাদী মহিলাদল মৌলভীবাজার জেলা কমিটি ঘোষনা করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমদ স্বাক্ষরে এই কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহানারা বেগম বিএনপি নেত্রীর পরিচয়ে গেল নির্বাচনে মৌলভীবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ড মহিলা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ফুল দিয়ে নৌকার প্রতিকৃতি বানিয়ে খোদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেনকে উপহার দেন। সর্বশেষ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ জেলা আওয়ামীলীগের জয়বাংলা বাই সাইকেল শোভাযাত্রার কর্মসূচীতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমানের সাথে অংশ নেন।
এদিকে, জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে আওয়ামীলীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেয়া ও তাদের নৌকা উপহার দেয়ার বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়।
তবে- জাহানারা বেগম আওয়ামীলীগ নেতাদের নৌকা উপহার দেয়ার কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর নির্বাচন করতে তিনি রাজনৈতিক কৌশল গ্রহনে এ কাজটি করেছেন এবং সফল হয়েছেন। এ কারণে অনেকটা আবেগের বসে তিনি ‘কৃতজ্ঞতাবশত’ আওয়ামী সংসদ সদস্যসহ অন্য নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে ফুলের নৌকা উপহার দিয়েছেন’। জাহানারা বেগম বলেন, ‘পরপর তিনবার পৌরসভায় কাউন্সিলর নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলাম। দ্বিতীয় দফায় এক ভোটে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছিল। এজন্য এবার রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আওয়ামীলীগের নেতাদের হাতে রাখার কৌশল গ্রহন করেছি’। জাহানারা বেগম এজন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ আমি এজন্য অনুতপ্ত’।
তবে জাহানারা বেগমের এই দুঃখ প্রকাশকে ভালো চোখে দেখছে না বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী ও তৃণমূল নেতা কর্মিরা। অনেকের অভিযোগ, সামনে জাতীয় নির্বাচন। বিভাগীয় শহরগুলোতে গণ সমাবেশ চলছে। নানা প্রতিকূলতার মাঝে লাখ লাখ মানুষ এসব সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সামনে আরো কঠোর কর্মসূচী নিয়ে আমরা মাঠে নামবো। এসময় আওয়ামীলীগ ঘেষা একজন নারীকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা সমচীন হয়নি। তারা বলেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেয়া এবং নেতাদের বাসা-বাড়ি গিয়ে নৌকার প্রতীক উপহার দেয়া জাহানারা বেগম বিএনপির না আওয়ামীলীগের? তা আগে ফায়সালা হওয়া উচিত। তা না হলে কোন নেতা কর্মী তাকে বিশ^াস করবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলাদলের একাধিক নেতাকর্মী বলেছেন, যারা সুবিধা আদায়ে প্রতিপক্ষ দলের এমপি নেতাদের পায়ের কাছে পড়ে থাকে তারা আগামী দিনের সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে কিসের নেতৃত্ব দিবে-এটা তামাশা আর হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। তারা জাহানারা বেগমের পদ দ্রুত প্রত্যাহারের দাবী জানিয়ে বলেন, তা না হলে ভবিষ্যতে তৃনমূল কর্মীদের কাছে বিএনপির পদ পাওয়ার জন্য আওয়ামীলীগের লেজুড়বৃত্তি করার ভুল বার্তা পৌছাঁবে।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাউর রহমান বলেন, এনিয়ে দলের অনেকেই আমাকে জানিয়েছে। বিএনপির মতো একটি বৃহত্তম দলে এমন ঘটনায় আমরা বিব্রত। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টিগোচরে আনবো।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জাতীয়তাবাদী মহিলাদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার মুঠোফোনে বলেন,‘কেন্দ্রীয় মহিলাদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আপা এবিষয়ে ভালা বলতো পারতো। কিন্তু তিনি এখন জেলে। আমি এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো- বলে জেলা বিএনপির সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এর সাথে কথা বলার পারমর্শ দেন। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান এবিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান এর দৃষ্টিআকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন- ‘এটা দুঃখজনক। কেন্দ্রীয় মহিলাদলের সভাপতি সম্পাদকের অনুরোধে আমার সার্বিক সহযোগীতায় গত ৮ অক্টোবর জেলা মহিলাদলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে জাহানারা বেগম নামে কেউ অংশ নেয়নি। তার নাম কিভাবে আসলো, কার প্ররোচনায় আসলো- আমার জানা নেই। যে মহিলা আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে পৌর কাউন্সিলর হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের বাসায় গিয়ে ফুলের নৌকা দিয়ে আসছে, উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামীল নেতা কামাল আহমেদকেও ফুলের নৌকা দিয়ে আসছে। তার এই ছবি দেখে আমি নিজেও তাজ্জব। দুদিন আগে আমি এই ছবিগুলো পেয়েছি। আগামীকালের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবো’ বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর অনুস্টিত সম্মেলনে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি -সম্পাদক স্বাক্ষরিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি অনুমোদন দেন। এতে ডাক্তার দিলশাদ পারভীন কে সভাপতি শিল্পী আক্তার কে সম্পাদক মনোনীত করা হয়েছিল। ওই কমিটি বহাল রেখে গত ১ লা নভেম্বর সম্মেলনে ঘোষিত কমিটির সম্পাদক শিল্পী বেগমকে বাদ দিয়ে জাহানারা বেগমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।