শেষ মুহূর্তে চলছে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসবের প্রস্তুতি
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ নভেম্বর ২০২২, ৩:৫৫ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
মণিপুরী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব ঘিরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বইছে উৎসবের আমেজ। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ রংয়ের কারুকাজ। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
আগামী মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অন্যতম মণিপুরী সম্প্রদায়ের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল মন্দিরা আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা ও তার সখি রাধারলীলাকে ঘিরে এ দিন পালিত হবে।
মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুরের জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ১৮০তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মীতৈ (মণিপুরি) সম্প্রদায়ের ৩৭তম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন। মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবের সকাল বেলায় গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই নৃত্য। এরপর সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভা শেষে রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ। মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে গেয়ে কৃষ্ণ বন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে এই রাসলীলা।
রাস নৃত্যের শিক্ষক অজিত কুমার সিংহ বলেন, ‘এখন রাস উৎসবের মহড়া চলছে। মহড়ায় আসা মনিপুরী ছেলেমেয়েদের রাস নৃত্যের বিভিন্ন কৌশল ও নিয়মকানুন শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাস উৎসবে গান ও তালের সঙ্গেই সারারাত ধরে নাচতে হবে শিল্পীদের। তাই এখন ছেলেমেয়েদের শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী মহড়া চলছে।’
রাস নৃত্যের শিক্ষক আরও জানান, মূলত রাস উৎসবের প্রায় এক মাস আগ থেকেই মহড়া শুরু হয়। রাস উৎসবে অংশ নেওয়া মনিপুরী ছেলেমেয়েদের অনেকেই নতুন। আবার অনেকে পুরাতন। তাদের মহড়া দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিদিন নিয়ম মেনে সবাই এখানে আসেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নৃত্যের মহড়া চলে।
রাস নৃত্যের আরেক শিক্ষক ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, ‘রাস নৃত্যের জন্যই এখন মহড়া হচ্ছে। দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা এই রাস উৎসব দেখতে এখানে ভিড় করেন। এটা হচ্ছে মনিপুরীদের ঐহিত্যবাহী উৎসব।’
মাধবপুর মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, আগামী ৮ নভেম্বর সকাল ১১টা থেকে ‘গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য’ দিয়ে রাস উৎসবের শুরু হবে। ইতিমধ্যে রাস উৎসবের সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। উৎসবে দিন একটানা বিরতিহীন নাচ করেন শিল্পীরা। গোষ্ঠলীলায় রাখাল সাজে শ্রীকৃষ্ণের বালকবেলাকে উপস্থাপন করা হবে। এতে থাকবে কৃষ্ণের সখ্য ও বাৎসল্য রসের বিবরণ। গোধূলি পর্যন্ত চলবে রাখালনৃত্য। সন্ধ্যা ৭ টায় উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাত ১১টা থেকে পরিবেশিত হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। রাসনৃত্য ভোর (ব্রাহ্ম মুহূর্ত) পর্যন্ত চলবে বলে তিনি জানান।