চা-শ্রমিকদের বেতন বকেয়া ৩০০ কোটি, পূজার আগে মজুরি প্রদানের দাবী কেন্দ্রীয় নেতাদের
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৬:৫৫ অপরাহ্ণ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি::
চা শ্রমিকদের মজুরী ১৭০ টাকার ভিত্তিতে ১লা জানুয়ারী ২০২১ থেকে বকেয়া মজুরী প্রদানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।
রোববার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল।
বক্তব্যে নিপেন পাল বলেন, ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন মজুরি বৃদ্ধির জন্য যে আন্দোলন ঘোষণা করেছিলো সেই ঘোষণার পর বাংলাদেশের সকল চা শ্রমিকনেতৃবৃন্দ, চা শ্রমিক মা বোন-ভাইসহ ছাত্র যুব সমাজ একযোগে মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। সেই আন্দোলন সংগ্রামের সুফল হিসেবে গত ২৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চা শ্রমিকদের ১৭০ টাকা মজুরী নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক দ্বি-পাক্ষিক শ্রম চুক্তি বিগত ধারা অনুযায়ী গত ১লা জানুয়ারি ২০২১ হতে ২৭ শে আগস্ট ২০২২ ইংরেজি পর্যন্ত চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরী মালিক পক্ষ পরিশোধ করার কথা থাকলেও মালিকরা সেটা করছেন না। এছাড়াও মালিক পক্ষ চা বাগানগুলোকে শ্রেণী/ক্যাটাগরী ভেদে চা শ্রমিকদের সম মজুরি হতে বঞ্চিত রাখছেন, স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকদের সমপরিমাণ মজুরির চুক্তি থাকলেও বেশিরভাগ চা বাগানের মালিক পক্ষ অস্থায়ী শ্রমিকদের জন্য নিজেরা মজুরী নির্ধারণ করেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক অন্যান্য সুবিধাদী বৃদ্ধির কথা থাকলেও সেখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে চলেছেন, যার ফলে চা শ্রমিকদের মধ্যে বিরাট ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে চলেছে।’
আসন্ন দূর্গাপূজা উৎসব উদযাপনের পূর্বে চা শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় বকেয়া মজুরীসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অপরিশোধিত থাকলে পুনরায় শ্রম অসন্তোষ কিংবা দেশে চা উৎপাদনশীলতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে কোনভাবেই ইউনিয়নকে দায়ী করা যাবে না বলে জানা চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ চা সংসদের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের ১লা জানুয়ারি ২০২১ হতে আমাদের কার্যকর হবে এবং ৫০ টাকা বৃদ্ধি হয়েছে। এবার মালিকপক্ষ তাল-বাহানা করছে। প্রতিটা শ্রমিকের দৈনিক ৫০ টাকা হারে ২০ মাসে আসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। আমাদের প্রায় ৯৭ হাজার স্থায়ী শ্রমিক আছে। সেই ৯৭ হাজার শ্রমিকের বেতন ৩০ হাজার টাকা করে হিসাব করলে প্রায় দুইশো একানব্বই কোটি টাকা মালিকপক্ষের কাছে পাওনা রয়েছে। সেই টাকা দেওয়ার জন্য আমরা বারবার মালিকপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা বিভিন্ন তাল-বাহানা করছে, বেতন না দেওয়ার একটা পরিকল্পনা করছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে চলেছে।’
এদিকে আজ সকালে শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের শ্রীমঙ্গলস্থ প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটে (পিডিইউ) চা উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গদের দক্ষতা উন্নয়নকল্পে আয়োজিত ‘টি টেস্টিং এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল’ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বকেয়া মজুরী যেনো দুর্গা পূজার আগে প্রদান করা হয় সে জন্য চা বোর্ডের পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের বলা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার, সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, কার্যকরী সভাপতি বৈশিষ্ট তাঁতি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, মনু-ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি, সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাইনকা, বালিশিরা ভ্যালির সহ-সভাপতি সবিতা গোয়ালা প্রমূখ।