চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে নগদ অর্থ সহায়তার কার্ড বিতরণে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ৫:৫৬ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি::
সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় চা-শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি’র অন্তর্গত এককালিন নগদ অর্থ সহায়তার কার্ড বিতরণকালে চা শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি ৩০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট ইউপির খাইছড়া চা বাগানের নাট মন্দিরে চা শ্রমিকরা জড়ো হয়ে ইউপি সদস্য দয়াল বুনার্জী ও তার ছেলে মনিশংকর বুনার্জীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
এসময় সমাবেশে সবিতা বাড়াইক, বিপুল ভুইঁয়া ও হারুনসহ ১০-১২ জন ভুক্তভোগী চা শ্রমিক জানায়, ‘দয়াল মেম্বারের ছেলে আমাদেরকে বলে আইডি কার্ড যে সমাজসেবা অফিসে দিছো টাকার জন্য। সরকার থেকে তোমাদের টাকা আইছে, ৫ হাজার টাকা। এখন ৩০০ টাকা দেও, আমি কার্ড দিচ্ছি। তখন আমরা বলি যে, ৩০০ টাকা কই পামু। তখন মেম্বারের ছেলে বলে, টাকা না দিলে তুমি মেম্বারের কাছে যাইবা। আর ৩০০ টাকা নিয়ে যাইবা। পরে ৩০০ টাকা দেওয়ার পর আমাদেরকে কার্ড দিছে মেম্বার দয়াল বুনার্জী।’
ভুক্তভোগী চা শ্রমিকরা আরও জানায়, ‘রাতে ঘরে ঘরে গিয়ে মেম্বারের ছেলে জানায় তোমাদের ৫ হাজার টাকার কার্ড আইছে, তোমরা ৩০০ টাকা করে না দিলে কার্ড পাইবায় না। ৩০০ টাকা দিতে হবে। তখন মেম্বারের কাছে গেলে, মেম্বার বলে এখন কার্ড দেওয়া যাবে না। এটা আমি ঘরে পৌছাবো। তারপর তিন-চার ঘর থেকে ঋণ করে ৩০০ টাকা এনে দেওয়ার পর আমাদের কার্ড দেয় মেম্বার। ভুক্তভোগীরা জানায়, টাকা না দিলে কার্ড দেবে না তাই বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে তারা কার্ড নিয়েছেন।’
সমাবেশে খাইছড়া চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি পুস্প দাস পানিকা বলেন, ‘দুইদিন আগে সমাজসেবা থেকে কার্ড আসার পর চেয়ারম্যান কার্ড পাঠাইছে মেম্বারের কাছে। চেয়ারম্যান মেম্বারকে বলছে পঞ্চায়েত সভাপতি ও সর্দারকে দিয়ে তুমি কার্ড বিতরণ করবে। কিন্তু মেম্বার দয়াল বুনার্জী আমাদেরকে বলে নাই। না বলেই কার্সড বিতরন করছে। সন্ধ্যার পর হঠাৎ মেম্বার আমাকে রাস্তায় পেয়ে জানায় যে, সরকার থেকে শ্রমিকদের এককালিন ৫ হাজার টাকার কার্ড আসছে, আমি বিতরণ করছি। কিন্তু বিতরণের পর জানতে পেরেছি, যে কার্ড দিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে বাড়তি টাকা নিচ্ছে দয়াল মেম্বারের ছেলে মনিশংকর বুনার্জী। কার্ডটা নেও টাকা দেও, টাকা না দিলে কার্ড দেব না। ৫ হাজার টাকা পাওয়ার আগে যে, সে ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে এর কারণটা বুঝতে চাই?’
তবে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য দয়াল বুনার্জী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি সব ছেলেদেরকে ডেকে জানতে চেয়েছি তারা কেনো টাকা নিছে, তখন তারা বলছে মন্দিরের জন্য নিছে। কার্ড দিয়ে টাকা নেওয়ার কোন যুক্তি নেই। আমি বাগানের মুরুব্বি ও পঞ্চায়েত কমিটিকে নিয়ে বসবো, ছেলেগুলা যে টাকা উত্তোলন করেছে তার একটা সঠিক সমাধান করবো।’
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘চা শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে উপহারসরুপ এই টাকা দেওয়া হচ্ছে। এই ৫ হাজার টাকা চা শ্রমিকদের জন্য বিশাল টাকা। এই টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে যদি কার্ডের জন্য টাকা নেওয়া হয় তাহলে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’