মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে চা শ্রমিকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০২২, ৩:৫৮ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
৩০০ টাকা মজুরির দাবীতে আজ থেকে সারাদেশে চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। বর্তমানে একজন শ্রমিক দৈনিক মজুরি পান ১২০ টাকা। শ্রমিকরা দাবি করছেন ৩০০ টাকা। এর আগে টানা চারদিন দুই ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন করেছিলেন চা শ্রমিকরা।
শনিবার (১৩ আগষ্ট) সকাল থেকে সারাদেশের সকল চা বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু হয়।বিকেলের মধ্যে মালিক পক্ষের আশ্বাস না পেলে আজ থেকে কঠোর আন্দোলনে নামবে এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। দেশের ২৩১ চা বাগানে এক যোগে প্রতিটি চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েত সভাপতির নেতৃত্বে শ্রমিকদের স্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চা বাগান গুলো।
চা বাগানের নারী শ্রমিক উমা হাজরা বলেন, আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই, এদিয়ে আমাদের চলেনা। আমরা অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাই। খাওয়াদাওয়া ভালো হয় না, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ভালো হয় না। সব কিছুর দাম বাড়ে আমাদের মজুরি বাড়েনা। আমরা কোন রকমে জীবন কাটাচ্ছি। চায়ের দাম ও উৎপাদন বাড়ে, আমাদের মজুরি কেন বাড়বে না। আমরা যদি বেচে না থাকি তাহলে চা বাগানে ধস নামবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, চা শ্রমিকদের একদিনের মজুরি দিয়ে ১ লিটার পেট্টল ও কেনা সম্ভব না। শ্রমিকরা কি নিদারুন কষ্টে রয়েছেন তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতিতে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কিচ্ছু হয় না। শ্রমিকরা ভালোমন্দ খেতে পারে না। মজুরি বৃদ্ধি না হলে শ্রমিকরা কঠিন পরিস্থিতিতে পরবে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল বলেন, আমরা গত ১৯ মাস ধরে কত আন্দোলন, সংগ্রাম করছি। কিন্তু মালিকপক্ষের টালবাহানা কমছে না। বর্তমান সময়ে বাজার দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করছি। কিন্তু তারা বারবার টালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফেপে উঠছেন।
তিনি বলেন, দেশ-বিদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বিবেচনা করে নুন্যতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ টাকা থেকে ৩শ টাকায় বৃদ্ধি করার দাবি অনেক দিনের। মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরী হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও হবে না।আজ ৪র্থ দিনও মালিক পক্ষ দাবি মানে নি। আমরা আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করে যাব।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় বলেন, বর্তমান সময়ে ১২০ টাকা মজুরিতে চলা মুশকিল। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার এই যৌক্তিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। আমরা চা শিল্পের ক্ষতি চাই না। আমরা চাই চা শিল্প বেঁচে থাকুক। চা শিল্প বেঁচে থাকলে শ্রমিকরাও বাঁচবে। তাই চা শিল্প টিকিয়ে রাখতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে আগে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।