পুত্রবধূর পরকীয়ার বলি বয়োবৃদ্ধ শিক্ষক!
প্রকাশিত হয়েছে : ২ আগস্ট ২০২২, ৮:২০ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
প্রায় দুই যুগ ধরে এলাকায় প্রাইভেট পড়াতেন মোঃ ছোয়াব মিয়া (৮২)। ওনার ছাত্ররাও আজ প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক। বয়সের ভারে নুয়ে পরা এই শিক্ষক এখন নিজ গৃহেও পাচ্ছেন না ঠাঁই। ছেলে, পুত্রবধূ ও কর্মচারীর অত্যাচারে এখন তিনি বাড়ি ছাড়া। ঘটনাটি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের।
সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে ছোয়াব মিয়ার নিজ বাড়িতে স্থানীয় পঞ্চায়েত ও সাংবাদিকদের সামনে বয়োবৃদ্ধ শিক্ষক মোঃ ছোয়াব মিয়া জানান, ওনার একমাত্র ছেলে সেলিম মিয়া(৩৫) আনসারের চাকরি করতেন সিলেটে। সেই সুবাধে ছেলে সিলেটে থাকতেন এবং ছেলের বউ রিমা আক্তার (২৭) ও নাতি রেদুয়ান আহমদ (৬) ছোয়াব মিয়ার নিজ বাড়িতে থাকতেন। গত ৮/৯ মাস যাবত ছেলে সেলিম মিয়া বাড়িতে একটির মুরগীর খামার করেন এবং সেখানে মোঃ রয়েছ আহমদ (৩৫) নামের একজন কর্মচারী নিয়োগ দেন। ওনার ছেলে সেলিম মিয়া বাড়িতে না থাকলে কর্মচারী মোঃ রয়েছ আহমদ তার স্ত্রীর সাথে একই বিছানায় ঘুমায়। এবিষয়ে ছেলে সেলিম মিয়াকে জানালে সে তা বিশ্বাস না করে উলটো ছোয়াব মিয়াকে বাড়িতে এসে মারধর করে। খেতে চাইলে পুত্রবধূ খাবার দেয় না। বরং নির্যাতন করে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তিনি সম্মান হারানোর ভয়ে কাউকে কিছু বলেন না। পরে বাধ্য হয়ে তিনি তাঁর ভাই ও ভাতিজাকে সব খুলে বলেন। ভাই ও ভাতিজা গ্রামের পঞ্চায়েত কে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় রিমা আক্তার বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন।
ছোয়াব মিয়া বলেন, আমাকে ডাক্তারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সেলিম আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়৷ পরে জানতে পারলাম সে বাড়ির যায়গার অর্ধেক তার নামে ও বাকি অর্ধেক তার বউয়ের নামে করে নিয়েছে। সে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র যাওয়ার চিন্তা করছে। আমি এতে বাধা দেয়ায় আমাকে খুব বেশি মারধর করে। পরে আমি আমার মেয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই।
ছোয়াব মিয়ার ভাতিজা গ্রাম্য ডাঃ ছালিকুর রহমান বলেন, মুন্সিবাজার আমার চেম্বার থাকায় পরিবার নিয়ে এক যুগ ধরে আমি বাজারেই ভাড়া বাসায় থাকি। সেদিন চাচা আমাকে ফোনে বলেন বাড়িতে যাওয়ার জন্য। আমি গিয়ে ঘটনাটি শুনে জানা মুরব্বীকে সাথে নিয়ে সেলিমকে জিজ্ঞাসা করলাম সে এমন কেন করছে। কিন্তু সে কোনো উত্তর না দিয়ে পরদিন আমি ও আমার দুই চাচার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ছোয়াব মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া বলেন, আমার আবার সাথে উঠা বসা সব কিছুই ঠিক আছে। বাবার সাথে তো কোনো সমস্যা নাই আমাদের। এই অভিযোগ সব গুলোই মিথ্যা। আমার বউকে ধর্ষণ করায় আমি আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমি আমার স্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য অন্যত্র একটি বাসা ভাড়া করে আমার জিনিসপত্র নেয়ার জন্য রাতে গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। তখন আসামীরা পুলিশ এনে আমার বাড়িতে পুলিশ তালা মেরে রাখছে। পরদিন আমি তালা ভেঙ্গে আমার ঘরে ঢুকেছি।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টা ২৪ মিনিটে রিমা আক্তারের ফোন নাম্বারে কল দিলে রয়েছ আহমদ কল রিসিব করেন। তিনি বলেন আমি রাতে আপনার সাথে কথা বলবো। এখন একটু ব্যাস্ত আছি।
৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লিটন মিয়া বলেন, ছোয়াব মিয়ার বাড়িতে তালা দিয়ে ওসি স্যার আমার আছে চাবি দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন যে এই বিষয়টি গ্রামের মুরব্বিদের সাথে নিয়ে সামাজিকভাবে সমাধান করে দেয়ার জন্য। কিন্তু সেলিম তা অমান্য করে তালা ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করেছে। সে বিচার মানতে রাজি না।
এবিষয়ে রজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) বিনয় ভূষণ রায় বলেন, আমরা জানতে পেরেছি রাত ২ টার সময় বাবার সম্পত্তি ছেলে নিয়ে বৃদ্ধ বাবাকে একা রেখে স্থান ত্যাগ করতে চাচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সেখানে গিয়ে মানবিক দিক থেকে বৃদ্ধ বাবার নিরাপত্তার কথা ভেবে ছেলেকে কোনো কিছু নিতে দেয়নি। বৃদ্ধের ছেলে ওনাকে খাবার দাবার দেয় না। সে তার বাবার সম্পত্তির ৭ শতক যায়গা নিজের নামে ও ৪ শতক যায়গা তার স্ত্রীর নামে করে নিয়েছে।