উন্নত ভবিষ্যতের খোঁজে শিক্ষিত তরুনরা পাড়ি জমাতে চায় হাজার মাইল দুরের দেশে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ মে ২০২২, ৬:২৮ অপরাহ্ণ
তাজুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য থেকেঃ
বাংলাদেশের সব সমস্যার মূল কারণ জনসংখ্যার আধিক্য এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। সীমিত সম্পদের ছোট্ট একটি ভূখন্ডে যে পরিমাণে কর্মসংস্হানের সৃষ্টি হচ্ছে তারচেয়ে অধিক সংখ্যায় প্রতিদিন জনসংখ্যা বাড়ছে, রাষ্ট্রের চালক জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা নিয়ে নতুন প্রজন্মের সম্মুখে আশার আলো সৃষ্টি করতে পারছে না আর সেই কারনেই ভবিষ্যত ক্রমেই অন্ধকারের দিকে ছুটছে। জীবন জীবিকার সন্ধানে তরুনরা দেশ ছেড়ে হাজার মাইল দুরের দেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
আমাদের দেশের যুবকদের সম্মুখে সেই মানুষটাই মডেল যার অটাল সম্পদ আছে, যার অধিক ক্ষমতা আছে, যার অবৈধ সম্পদে বিলাসি জীবন আছে। ধর্ম দেখায় পরকালের ভয়, রাষ্ট্র দেখায় আইন আদালত আর পুলিশের ভয়! অথচ টিকে থাকার তীব্র লড়াইয়ে হেরে গেলে জীবন-জীবিকার কী হবে তার কোন নির্দেশনা আমাদের সরকারের নেই। এত অভাবের মধ্যেও কিছু লোক অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে বিদেশে পাচার করছে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা। কেউ আবার বিদেশ বাড়ি কিনে নাম দিয়েছে বেগম পাড়া। সবকিছু দলীয় করনের কারনে আইন এবং আদালতের বিচার ব্যবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘প্রশ্ন’ কবিতায় লিখেছিলেন “বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে” বেঁচে থাকলে হয়তো এখন তাঁকে লিখতে হতো, বিচারের বাণী সরবে প্রকাশ্যে কাঁদে। ক্ষমতার প্রভাব আর টাকার কাছে সবকিছু হার মানায়।
ক্ষমতা আর অবৈধ সম্পদের মহিমায় কিন্তু অনেকে আবার সমাজের সাধারন মানুষের সমীহ আদায় করতে মসজিদ করে, মন্দির বানায়, গির্জা বানায় এবং সেই উপসনালয়ের সভাপতি হয়ে আবার পরকালের সুখও নিশ্চিত করতে চায়। পাড়ায় পাড়ায় রাজনৈতিক দল এবং নেতার অফিস দেখলেও দেখতে পাবেন না লাইব্রেরি। ভোট প্রার্থীদের টাকায় মাদ্রাসা হয়, মক্তব হয়, মন্দির হয়, হয় না কোন ফ্যাক্টরী কিংবা বিজ্ঞানাগার। একটা ফ্যাক্টরির মাধ্যমে কর্মসংস্হানের সৃষ্টি হলে দুই দিক থেকে লাভমান হওয়ার সুযোগ থাকে, অন্তত কিছু মানুষ মুক্তি পায় বেকারত্ব নামক অভিশাপের কবল থেকে। গ্রাম কিংবা শহরের যুবকদের খেলার মাঠ নেই, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই সেজন্যই তারা বাইরে আড্ডা দিতে দিতে একটা সময় সহজেই যুক্ত হয়ে যায় মরন নেশার দিকে।আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার বলেন আর জাতীয় সরকার বলেন সৃজনশীল বিকাশে কারো কোন পরিকল্পনা নেই।
শিক্ষিত তরুনরা একটা দেশ এবং জাতির ভবিষ্যত। একটা রাষ্ট্রের উন্নতি এবং অবনতি নির্ভর করে সেই দেশের তরুণদের উপর। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে তরুনদের অবদানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, প্রতিটা রাষ্ট্রের তরুনরাই হচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বর্তমানে আমাদের সমাজের তরুনদের গন্তব্য কোন দিকে? সন্ত্রাস চাঁদাবাজি আর মরণব্যধি মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে করে যেমন সে নিজেকে ধংস করছে পাশাপাশি করছে তার পরিবার সমাজ এবং একইভাবে ধংসের দারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে একটা দেশ। ১৮ বছরের একটা তরুন দুই মাস প্রবাসে অতিবাহিত করে যদি বলে এখন দেশে ফিরলে আমার ভবিষ্যত কি হবে! তাহলে বুঝতে বাকি থাকে না তরুনরা কেনো দেশ ছেড়ে প্রবাসে আসছে। বর্তমান সময়ে তরুনদের দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে যাবার একটাই কারন তারা নিজের দেশে আলোর ভবিষ্যত দেখতে পায়না। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্র যেমন চায় তার দেশের স্বার্থে তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা এর উল্টো নিজের স্বার্থ আর ক্ষমতায় ঠিকে থাকার জন্য গোল্ডফিস মেমোরির তরুণদের ব্যবহার করা হয় ভিন্ন ভাবে। যে বয়সে তরুনরা চিন্তা করার কথা নিজের দেশ এবং ভবিষ্যত জীবনের সেখানে তরুণরা চিন্তা করে দেশ ছেড়ে প্রবাসে গিয়ে সুন্দর জীবন গড়ার। যে বয়সে চিন্তা করিনি বাড়ির বাইরে একা থাকার সেই বয়সের তরুনরা আজকে মা মাটির মায়া ত্যাগ করে হাজার মাইল দুরের দেশে আসতে তোয়াক্ষা করে না। কারন একটাই উন্নত জীবন আর আলোর সন্ধান। একটা দেশের শিক্ষিত তরুনরা যদি এভাবে দেশ ছেড়ে অন্য আরেকটা দেশে চলে যায় তাহলে সেই দেশের ভবিষ্যত কি হবে সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী।