রাত পোহালেই মৌলভীবাজার ও রাজনগরে ভোটযুদ্ধ, প্রবাসী-বিদ্রোহীদের কাছে অসহায় নৌকা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রবিবার। মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার মধ্যে একটি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন একজন। মূলত ১৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন ৯৪ জন প্রার্থী।
প্রবাসী আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের দাপুটে অসহায় ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। একদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিজ নিজ এলাকায় ভালো অবস্থান ও জনপ্রিয়তা অন্যদিকে প্রবাসী প্রার্থীদের টাকার ছড়াছড়ি। এই দুইয়ের মধ্যে পড়ে নৌকার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।
এর মধ্যে আওয়ামী বিদ্রোহী ২৭ জন এবং প্রবাসী ১৩ জন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬০ জন, এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-১২ জন, আওয়ামী বিদ্রোহী-১৫ জন ও অন্যান্য-৩৩ জন। এই উপজেলায় প্রতিদ্ব›দ্বী ৬০ জনের মধ্যে ৫ জন প্রবাসীও রয়েছেন। রাজনগর উপজেলার ৮ ইউনিয়নে মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে মোট ৩২ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন।
এর মধ্যে আওয়ামীলীগের-৭, আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী-১২ এবং অন্যান্য-১৩ জন। এই উপজেলায় ৩২ জন প্রতিদ্ব›দ্বীর মধ্যে প্রবাসী রয়েছেন ৮ জন। ২০ ইউনিয়নে ২০ জন প্রার্থী থাকলেও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় ইতিমধ্যে নির্বাচিত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী এই পরিস্থিতির জন্য জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করছেন। অনেক নেতা কর্মি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন দুটি উপজেলায় ১৯ টির মধ্যে ২ থেকে ৩টি নৌকা পাবে, বাকিগুলোতে বিদ্রোহী সহ অন্যরা জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এরজন্য দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন যোগ্য লোক দেখে নৌকা দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী যারা তাদের স্ব স্ব এলাকায় জনভিত্তি অনেক শক্ত। তাদের মতে নৌকার মাঝি দূর্বল থাকায় নৌকার ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ।
সচেতন মহল ও স্থানীয় ভোটাররা মনে করেন, দলীয় সঠিক সিদ্ধান্ত না থাকা এবং অভ্যন্তরিন সমস্যা থাকায় ভোটের মাঠে বেগ পেতে হবে নৌকাকে, কারণ খোদ ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগি সংগঠন কয়েকভাগে ভাগ হয়ে গেছেন । সচেতন ভোটার ও ব্যবসায়ী সেলিম আহমদ জানান, ভোটাররা এখন অনেক সচেতন। নির্দিষ্ট প্রতীক বা ভয়ভীতির কারণে ভোট দিবে সে চিত্র এখন আর নেই। ফলে এলাকায় মানুষের উপকার করবে এরকম প্রার্থী ভোটাররা চায়। ভোটার রুমেন আহমেদ বলেন, এখন এমন অবস্থা হয়েছে, নৌকার বুনিয়াদি মানুষ এখন নৌকার পরিবর্তে অন্য প্রতিকের পক্ষে ভোট চাইছেন। ফলে দীর্ঘদিন থেকে নৌকা প্রতীকে যারা ভোট দিচ্ছেন তারা পড়েছেন দোটানায়। নৌকার ভোটাররা নৌকার পরিবর্তে অন্য প্রতিকের জন্য কাজও করছেন।
কামালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি, (সদ্য বহিস্কৃত) বিদ্রোহী প্রার্থী আপ্পান আলী জানান- আমি দলের ইউনিয়ন সভাপতি, ১৯৮৭ সালে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সেই থেকে দায়িত্ব পালন করছি কাজ করছি। দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় সরকারি সহায়তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত অনেক সহায়তা আমি মানুষকে করেছি, বিশেষ করে করোনার সময়। ইউনিয়নের মানুষ আমাকে চায়, তারাই জোরে আমাকে দাঁড় করিয়েছে। অথচ দল থেকে ভুল মানুষকে নৌকা প্রদান করা হয়েছে। এলাকার জনগণ আমার পক্ষে, আমি জয়লাভ করবো।দলে আছি আজিবন থাকবো।
আখাইলকুড়া ইউনিয়নের আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থী এমদাদুর রহমান রেনু বলেন ছাত্র জীবন থেকে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। পরিস্থিতির কারণে নৌকার বাইরে গিয়ে নির্বাচন করতে হচ্ছে এর জন্য দলের উর্ধতন নেতৃবৃন্দ দায়ী। আমার এলাকার মানুষ আমার সাথে আছে সেটা ফলাফল আসলে বুঝা যাবে।
মুন্সিবাজার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রবাসী রাহেল হোসেন বলেন- আমি প্রবাসে থাকলেও ঘন ঘন দেশে এসেছি, মানুষের জন্য কাজ করেছি। এলাকার মানুষই আমাকে চেয়ারম্যানে দাড় করিয়েছে। তারা উন্নয়ন চায়, সন্ত্রাস মাদকমুক্ত এলাকা চায়, পরিশেষে শান্তি চায়। এলাকার মানুষের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এলাকার মানুষই আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।