অবিলম্বে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ন্যায্য মজুরি ঘোষণার দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ৬:৩৬ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক::
স’মিল সেক্টরে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে অবিলম্বে বাজারদরের সাথে সংগতিপূর্ণ ন্যায্য মজুরি ঘোষণা, ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও গণতান্ত্রিক শ্রমআইন প্রণয়নের দাবিতে কমলগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের সভা অনুষ্টিত হয়।
১০ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে নসরতপুরস্থ কার্যালয়ে অনুষ্টিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কমলগঞ্জ উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোস্তাক মিয়া। স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আদর মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্টিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস ও ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স’মিল শ্রমিক সংঘের, সহ-সভাপতি মোঃ ছালামত মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল মজিদ, কোষাধ্যক্ষ ফটিক বক্ত, দপ্তর সম্পাদক আবাছ বক্ত, সদস্য মরম আলী, রমজান আলী, মোঃ ইমরান মিয়া, মোঃ সায়েক আহমদ প্রমূখ। সভায় বক্তারা বলেন দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির বাজারে বর্তমানে স’মিল শ্রমিকরা যে মজুরি পান তা দিয়ে একজন শ্রমিক পরিবারের ১০ দিনও চলে না। চাল, ডাল, তেল, চিনি, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের উপর ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। জ্বালানি তেল, এলপি গ্যাস, গাড়িভাড়া বৃদ্ধিতে কারণে জনজীবন দিশেহারা। শ্রমিকদের চাকুরির নিশ্চয়তা ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। স’মিলের মালিকরা শ্রমআইন, রাষ্ট্রীয় আইনের তোয়াক্কা করেন না।
শ্রমআইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান, দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি, মজুরিসহ সাপ্তাহিক ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি(বছরে ১০ দিন), চিকিৎসা ছুটি(বছরে ১৪ দিন), উৎসব ছুটি(বছরে ১১ দিন) অর্জিত ছুটি(বছরে ২০ দিন) ইত্যাদির প্রদানের বিধান থাকলেও তা প্রদান করা হয় না। শ্রমিকদের কথায় কথায় ছাঁটাই করা হয়। শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে স’মিলে কর্মরত শ্রমিকদের শতকরা ৬০ শতাংশ দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। কাঠ চিরতে যেয়ে করাত ছিড়ে, করাত খোলে, বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কারণে, স্থানান্তর ও উঠানামা করার সময় গাছ পড়ে দূর্ঘটনা ঘটে শ্রমিক হতাহত হওয়ার ঘটনা সাধারণ চিত্র।
এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অঙ্গহানি হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। কাজ করতে যেয়ে এ সমস্ত দূর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের উপযুক্ত চিকিৎসা যেমন মালিক করেন না, তেমননি অঙ্গহানি ও মৃত্যুর জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপুরণও দেওয়া না। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে একজন শ্রমিকের দৈনন্দিন খাওয়া খরচ নিম্নতম ১৫০-২০০ টাকা, সেই হিসেবে ৬ জনের একটি পরিবারের জন্য শুধু খাবার খরচের জন্য মাসিক ২৪০০০ টাকা প্রয়োজন। শ্রমআইন অনুযায়ী ৫ বছর পর নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করার আইন থাকলেও প্রায় ৭ বছর পর গত ১ জুলাই ২০২১ স’মিল শিল্প সেক্টরের নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মজুরি বোর্ড বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি, জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি, কাজের ধরন ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে হেড মিস্ত্রির মূল মজুরি ২৪,০০০ টাকা, সহকারি মিস্ত্রির মূল মজুরি ১৯,৫০০ টাকা, সিনিয়র হেলপারের মূল মজুরি ১৫,২০০ টাকা, হেলপারের মূল মজুরি ১৩,০০০ টাকা, এর সাথে ৬০% বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ২৫০০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ১০০০ টাকা, বছরে দুই ঈদ ও পূজায় তিন মাসের মজুরির সমান উৎসব বোনাস, এক মাসের মজুরির সমান নবর্বষ ভাতা, প্রতি বছরে ১০% ইনক্রিমেন্ট(বর্ধিত মজুরি), ঝুঁকি ভাতা মাসিক ৩,০০০ টাকাসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদির বিষয় অন্তর্ভূক্ত করে নিম্নতম মজুরির গেজেট প্রকাশ করার জোর দাবি জানান।