বাড়িতে বাবার লাশ হচ্ছে দাফন-কাফন, মেয়ে পরীক্ষার হলে
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০২১, ৬:০৫ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় আজ রোববার (২১ নভেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। রাজিয়া ইসলাম নিছা উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রী। বাবা মারা গেছেন। চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। স্বজনেরা শোকে বিহ্বল। এমন অবস্থায় বাবার লাশ রেখে রাজিয়া ইসলাম নিছা নামের এক শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
জানা যায়, রোববার ভোরের দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিছার বাবা পতনঊষার গ্রামের মিজানুর রহমান বাবু (৪৫) মারা গেছেন। বাবার লাশ বাড়িতে রেখে রাজিয়া ইসলাম নিছাকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। রোববার সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যায় সে।
সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় দ্বিতীয় দিনের ভূগোল পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে বাবার লাশ দাফনে অংশ নেয় সে।
স্বজনরা জানান, রোববার নিছার দ্বিতীয় দিনের এসএসসি পরীক্ষা ছিল। এরমধ্যে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভোরে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর পর বাবা হারা নিছা মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও স্বজন ও শিক্ষকদের উৎসাহে সে রোববার সকালে উপজেলার মুন্সীবাজার কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশগ্রহণ করে পরীক্ষা দিয়েছে।
পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ ফয়েজ আহমেদ জানান, পরীক্ষার্থী নিছার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি আমরা শুনে সকালে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে স্বান্তনা ও উৎসাহ দিয়েছি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।
কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষা সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র কুমার পাল জানান, নিছা সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা তার সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখছি।
পরীক্ষা শেষে রাজিয়া ইসলাম নিছা জানায়, বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। বাবা চাইতেন আমি যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। বাবার আত্মাকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, বাবাকে হারানো যে কারও জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও এসএসসি পরীক্ষার্থী রাজিয়া ইসলাম নিছা বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমরাও তার পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।