মৌলভীবাজারে এনডিএফর কর্মীসভা অনুষ্ঠিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ৭:৩৭ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিবেদক::
জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) মৌলভীবাজার জেলা কমিটির এক কর্মীসভায় ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুজামন্ডপে হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট এবং অন্তত ৮ জন নিরিহ জনগণের অকাল মৃত্যুতে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বলেন সাম্প্রদায়িকতার মূল হোতা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালালেরা। সাম্প্রদায়িকতার উৎস হচ্ছে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা। তাই এই ব্যবস্থা পরিবর্তন ছাড়া জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তাসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করা সম্ভব নয়। দেশের এই কঠিন বাস্তবতায় তিনি সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য এবং সকল ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিশ্চিত করতে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানান।
২২ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে জেলা এনডিএফ’র সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাহজাহান কবির এই আহবান জানান। কর্মীসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলার কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক আম্বিয়া বেগম, জেলা এনডিএফ’র সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস ও কোষাধ্যক্ষ মোঃ শাহিন মিয়া, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ-২৩০৫ এর সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ সুমন, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ-২৪৫৩ এর সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোঃ মোস্তাক মিয়া, রিকশা শ্রমিকনেতা মোঃ জসিমউদ্দিন প্রমূখ।
কর্মীসভায় বক্তারা বলেন সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার না হওয়ায় দেশে একের পর এক ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক হামলা, লুটপাট ও সংখ্যালঘুদের সহায় সম্বল, বাড়িঘর ও জায়গা জমি দখল চলছে এবং ক্রমান্বয়ে তা বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র বর্তমান সরকারের আমলে গত ১৩ বছরে ৩ হাজারের বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, পিয়াজসহ সকল দ্রব্যমূল্যের লাগামীহীন উর্দ্ধগতিতে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, দেশ নিয়ে যখন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালরা গভীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত তখন জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভক্তি তৈরি করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা প্রত্যাশী সাম্রাজ্যবাদের দালাল দলগুলো সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত রয়েছে। শোষক-শাসক গোষ্টি তাদের কামেয়ী স্বার্থ হাসিলে সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার করে জনগণের মধ্যে বিভক্তি তৈরির অপতৎপরতায় চালাচ্ছে। শোষক-শাসক গোষ্ঠি সবসময়ই শোষণ-শাসনকে আড়াল করতে এবং জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত ও বিভক্তি সৃষ্টি করতে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায়সহ জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের দায়-দায়িত্ব সরকারের হলেও সরকার তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে, যার কারণে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও সরকার একটি ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান না করে প্রতিপক্ষকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে তৎপর।
কর্মীসভা থেকে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও সংস্থাসমূহের সাথে সম্পাদিত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সকল চুক্তি বাতিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল, বিনাবিচারে হত্যা-খুন-গুম বন্ধ, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল চালু, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ন্যূনতম মূল মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ ও শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী সংশোধিত শ্রম আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, সকল কৃষি ও এনজিও ঋণ সুদসহ মওকুফ, ধান-পাটসহ কৃষিপণ্যে ক্রয়ে সকল দূর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করে কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা, ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকের হাতে জমি ও কাজ, কৃষি উৎপাদনের খরচ কমানো এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য, সার, ডিজেল. কীটনাশকের দাম কমানোর দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।