বিয়ানীবাজারে হিন্দুদের মন্দিরে ইসলামপন্থীদের হামলা, নিহত ১
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২১, ৭:৫৫ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজার সংবাদদাতাঃ
হিন্দু মেয়ের সাথে প্রেমে জড়িত মুসলিম যুবকের শাস্তির দাবী ও মন্দিরে হামলাকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সংঘর্ষে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১ জন নিহত এবং ১৫/২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে উপজেলার ৮ নং তিলপাড়া ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গাংকুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে নিহত মাদরাসা ছাত্র ইমন রজব গ্রামের সিরাজ মিয়ার পুত্র এবং কট্রর-উগ্র ইসলামী সংগঠন তালামীযে ইসলামীয়ার কর্মী বলে জানা গেছে।
খৌঁজ নিয়ে জানা যায়,’কয়েকদিন পূর্বে রীতা চন্দ্র দাস নামে এক হিন্দু যুবতীর সাথে আব্দুল মুক্তাদির নামে এক মুসলিম যুবকের প্রেমের সম্পর্কের কথা ফাঁস হয়। এ খবরে এলাকায় রীতিমত তোলপাড় চলছিল। হেফাজত এবং তালামীয সহ ইসলাম পন্থীরা এ সংবাদ জানার পর থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। তারা সম্মিলিত হয়ে ঐ যুবককে সম্পর্কচ্ছেদ করে স্বধর্মে ফেরার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। আল্টিমেটাম না মানার কারণে তারা গতকাল বিকালে মাদরাসা ছাত্রদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। স্থানীয় দাসউরা বাজার থেকে মিছিল শুরু হয়ে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম গাংকুলে প্রবেশ করে সন্ধ্যার একটু পূর্বে। এসময় মিছিলে যোগদানকারী হেফাজত ও তালামীযের উগ্র কর্মীরা গ্রামে অবস্থিত ‘হিন্দু মুসলিম যুব পরিষদ’র কার্যালয় এবং একটি মন্দিরে ভাংচুর শুরু করে। মন্দিরে হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনতা এগিয়ে এসে উগ্রপন্থীদের হাত থেকে ঐতিহ্যবাহী মন্দির রক্ষার চেষ্টা চালান। এসময় উগ্রপন্থীরা মন্দির রক্ষায় এগিয়ে আসা স্থানীয় হিন্দু-মুসলিমদের উপরও চড়াও হয়। এতে শুরু হয় উভয়পক্ষে সংঘর্ষ। এসময় ইট-পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে তালামীয কর্মী ইমন সহ বেশ উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ইমনকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইমন তালামীযে ইসলামীয়ার নেতা আব্দুল বাছিত জবলুর ছোট ভাই এবং স্থানীয় মাদরাসার ছাত্র বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে টিয়ারশেল,কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে সংঘর্ষে জড়িত ৪ জনকে আটক করে। আকটকৃতদের নাম হচ্ছে সাহাব উদ্দিন,বিমল দাস,আলী হোসেন ও রনি দাস।
ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে এ প্রতিবেদকের যোগাযোগ হয় সাবেক ইউপি সদস্য,আওয়ামীলীগ নেতা ইসলাম উদ্দিন এবং বর্তমান ইইপি সদস্য জামাল হোসেনের সাথে। তারা জানান,গাংকুল গ্রামের মস্তফা উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মুক্তাদির ও তার বড় ভাই সাহাব উদ্দিন জাসদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তারা মুসলিম হয়েও দীর্ঘদিন থেকে হিন্দুদের সাথে ব্যবসা সহ নানা সখ্যতা গড়ে তুলেছেন।’হিন্দু মুসলিম যুব পরিষদ’ নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে মুক্তাদির সেটার নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বারবার ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদেরকে বারবার সতর্ক করলেও তারা এসবের পরোয়া করেনি। সম্প্রতি আব্দুল মুক্তাদিরের সাথে হিন্দু একটি মেয়ের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক এলাকায় জানাজানি হয়েছে। এ নিয়ে ধর্মপ্রাণ লোকেরা তাদের উপর আরো ক্ষীপ্ত হয়েছে। গতকাল ক্ষোব্ধ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আব্দুল মুক্তাদিরের বিচারের দাবীতে মিছিল নিয়ে গাংকুল গ্রামে প্রবেশ করলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে একজন মারা গেছে। পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরাও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ভূমিকা রাখছেন।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী,এ ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখ সহ ২৫/৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে আজ থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহত ইমনের বড় ভাই আব্দুল বাছিত জবলু এ মামলা দায়ের করেছেন। ৯ জনের মধ্যে গ্রেফতার ৪ জন রয়েছেন। মামলার বাকী ৫ আসামী হলেন আব্দুল মুক্তাদির,রিপন আহমদ,স্বপন চক্রবর্তী,সবুজ কুমার ও হীরা।
সার্বিক বিষয় জানতে যোগাযোগ করা হলে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান,পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে নিহত ছাত্রের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। গ্রেফতার ৪ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য আসামীদেরকে ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।