কমলগঞ্জে কৃষি জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ৬:০৬ অপরাহ্ণ
জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ ::
কমলগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ধানি জমির উর্বর মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। কৃষি উৎপাদনে জমির উর্বর মাটি চাষাবাদের খুবই উপকারী। তবে দু’ফসলি কৃষি জমি থেকে উর্বর মাটি চলে যাওয়ায় উৎপাদনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের আশঙ্কায় কৃষকরা। ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার কুশালপুর, আদমপুর, মাধবপুর, মুন্সীবাজার, রাজদীঘির পাড়সহ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপকহারে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে ট্রাকযোগে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। স্তর বাঁধা কৃষিজমির মাঝখানে দেড় থেকে দুই ফুট পরিমাণ উর্বর মাটি কেটে নিচ্ছেন ইটভাটা মালিকরা। মুন্সীবাজারের রামপুর এলাকায় রাস্তার ধারে চতুর্দিকে কৃষিজমির মাঝ থেকেই এসকেবেটর লাগিয়ে উর্বর মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। অর্থাভাবে এসব কৃষক ইটভাটা মালিকদের কাছে জমির উর্বর মাটি বিক্রি করছেন। ভাটার মালিকরা ইট তৈরির কাজে তুলনামুলক কম দামে মাটি কিনে ভাটায় স্তুপীকৃত করছেন। ফলে আবাদি এসব জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। কৃষির উৎপাদনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে পরিবেশেরও ক্ষতি বয়ে আনছে।
কৃষক জিয়াউল হক, কয়সর মিয়া, এনামুল হক বলেন, গরিব কৃষকদের বেলায় ধানের চারা রোপনের পর দোকান থেকে সার-কীটনাশক বাকিতে আনতে হয়। এরপর শ্রমিকের খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ লাগে। বাধ্য হয়েই কমদামে ধান বিক্রি ছাড়া কোন উপায় থাকে না। কৃষকরা আরও বলেন, লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। আবার মহাজনরা যখন ধান কিনে নেন তখন ধানের দাম বেড়ে যায়। লাভ হয় মহাজনী ব্যবসায়ীদের। তাই অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও জমির উর্বর মাটি বিক্রি করতে হয়।
উপজেলার মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব বলেন, কৃষিজমির উর্বর মাটি খুবই জটিল বিষয়। উর্বর মাটির ছয় ইঞ্চি পরিমাণ গভীরতা চাষাবাদ উপযোগী। এই মাটি সরিয়ে ফেলা হলে পরের বছর সমুহে ভালো ফলন হয় না। প্রচুর গোবর-সার দিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়। জমিতে প্রচুর পরিমাণ কৃত্রিম সার লাগে। পুণরায় মাটির উর্বরতা সৃষ্টি হতে কমপক্ষে দশ থেকে পনের বছর সময় লেগে যায়। এটি কৃষিজমির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাসরিন চৌধুরী বলেন, কৃষিজমির উর্বর মাটি কেটে নেয়ার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে কোথাও কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।