কুলাউড়ায় এক পরিবাকে ৫ বছরের সমাজচ্যুতি ।। পঞ্চায়েতি সিদ্ধান্ত
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ৫:৩৫ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার ::
সামাজিক বিচারে সুবিচার পেলেন না কুলাউড়ার কাজল আহমদ। মৌলভীবাজার জজ আদালতে স্বত্ব মামলা করে বিপাকে পড়েছেন তিনি। মামলা দায়ের করার অপরাধে স্থানীয় কোরবানপুর গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যরা ৫ বছরের জন্য সমাজচ্যুত করেছে ওই পরিবারকে।
পঞ্চায়েত কমিটির নির্দেশে গত ৫ ডিসেম্বর থেকে তিনি সমাজচ্যুত অবস্থায় রয়েছেন। এতে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে। অন্যদিকে বয়েসীরা হাটবাজারে কিংবা মসজিদে যেতে পারছেন না।
আজ ২৫ জানুয়ারি সোমবার মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে কুলাউড়ার কুরবানপুর গ্রামের কাজল আহমদ এ অভিযোগ করেন। প্রেসক্লাবে আয়োজিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমাজচ্যুত কুলাউড়ার কোরবানপুর গ্রামের কাজল আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার গোষ্ঠীর চাচাত ভাই পাখি মিয়ার সাথে বিরোধ চলছিল। এ বিষয়টি মীমাংসার জন্য সামাজিকভাবে মুরব্বীরা চেষ্টা করেন। উভয় পক্ষের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জামানত নিয়ে গত ২০২০ সালের ১৯ জুন সালিশ বৈঠকের তারিখ দেন গ্রাম্য মাতুব্বররা। সালিশ বিচারকরা তার রেকর্ডীয় এক শতক ভূমি ফেরতের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। এরপর কাজল ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার সহকারি জজ আদালতে ৯৭/২০ নং স্বত্ব মামলা দায়ের করেন। এতে কোরবানপুর গ্রামের সালিশ বৈঠককারীরা তার ওপর চরম ক্ষুব্ধ হোন।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বিবাদী পাখি মিয়ার বাড়িতে পঞ্চায়েত বসে কাজল ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুত (একঘরি) করেন। মামলা প্রত্যাহার না করলে ৫ বছরের জন্য তাকে সমাজচ্যুত হয়ে থাকতে বলে তারা নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে লিগ্যাল নোটিশ করিয়েও পঞ্চায়েত কমিটির পক্ষ থেকে সুরাহ পাননি তারা।
কাজল জানান মসজিদ, মক্তব্যের চাঁদা নেওয়া হচ্ছে না এবং তাদের বাড়ির লোকজনকে মসজিদে যেতে নিষেধ দেওয়া হয়েছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজল ও আকমল দুই ভাই স্থানীয় বাজারে দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। তাদের দোকানে যেতে স্থানীয়দের বারণ করেছেন পঞ্চায়েতের মুরব্বীরা। এতে তাদের বকেয়া কয়েক লাখ টাকা আদায়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে সমাজচ্যুত পরিবার সামাজিক, ধর্মীয়, শিক্ষা, অর্থনৈতিকভাবে নানা প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এদিকে সামাজিক বয়কটে তাদের জীবন দুবির্ষহ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হুমকীর মধ্যে পড়েছে।
এদিকে এই পঞ্চায়েত কমিটি ওই গ্রামের জুবেল আহমদ নামক অপরএক ব্যক্তিকেও ৫ বছরের জন্য সমাজচ্যুত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন জুবেল আহমদ।
এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম জানান, কাজল মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন পঞ্চায়েতি সিদ্ধান্তে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। এই মুহূর্তে আমি ব্যস্ত আছি এখন কথা বলতে পারব না।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ, টি, এম ফরহাদ চৌধুরী জানান এ বিষয়টি সম্পর্কে কোন তথ্য জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।