প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ছুটছেন পর্যটকরা ।। প্রাণ ফিরেছে মাধবকুন্ডে
প্রকাশিত হয়েছে : ২ নভেম্বর ২০২০, ৬:৫৭ অপরাহ্ণ
এ.জে লাভলু, বড়লেখা ::
নির্জন পাহাড়ি ঝরণার আশপাশে ফিরেছে বুনো আবহ। পর্যটকদের হেঁটে চলার পথে জমে ওঠেছে শ্যাওলা। ফাঁকা জায়গাগুলোতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বুনো ঘাসলতা, জেগে উঠছে চেনা-অচেনা গাছ। দীর্ঘদিন পর ঝর্ণার শব্দের সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পাখির কলকাকলি, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে প্রকৃতির নতুন রূপ। দৃশ্যটি মাধবকুন্ডের। প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর্যটকের আনাগোনা না থাকায় যেনো প্রাণ ফিরেছে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র বড়লেখার মাধবকুন্ডের প্রকৃতিতে।
এদিকে করোনা সংকটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১ নভেম্বর রোববার থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মাধবকুন্ড। প্রথম দিন থেকেই দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রকৃতির জলকন্যার সান্নিধ্য উপভোগ ও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে বুকভরে নিশ্বাস নিতে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটছেন মাধবকুন্ডে । এতে জলপ্রপাত এলাকায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছরজুড়ে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ অবকাশ পেলেই ছুটে আসেন মাধবকুন্ডে। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবে সেখানে একটু বেশি পর্যটকের সমাঘম ঘটে। পর্যটকের পদভারে তখন মুখর হয়ে ওঠে জলপ্রপাত ও আশপাশ এলাকা। এতে বেঁচাকেনা বাড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
এ বছর করোনা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে ১৯ মার্চ থেকে সাময়িকভাবে মাধবকুন্ডের গেট বন্ধ করে দেয় বনবিভাগ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মাধবকু- জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পর্যটকদের হেঁটে চলার পথে জমে ওঠেছে শ্যাওলা। ফাঁকা জায়গাগুলোতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বুনো ঘাসলতা, জেগে উঠছে চেনা-অচেনা গাছ। দীর্ঘদিন পর ঝর্ণার শব্দের সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পাখির কলকাকলি, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে প্রকৃতির নতুন রূপ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা। পর্যটকদের কেউ কেউ জলপ্রাপাতের জলে নেমে শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছেন। হাঁটু সমান জলের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আবার অনেকে স্মৃতি ধরে রাখতে প্রিয়জনদের সাথে ছবি তুলেছেন।
ঢাকার শাখারীবাজার থেকে পরিবার নিয়ে প্রথম মাধবকুন্ড ঘুরতে আসা জনি ঘোষ বলেন, ‘মাধবকুন্ড খুলে দেওয়া হবে এটা জানতাম না। আমরা অন্য জায়গা ঘুরে এখানে এসেছি। খোলা পাওয়া গেলে ঘুরে দেখব এ উদ্দেশ্যে। দেখলাম খুলে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সকলে অনেক খুশি এখানে আসতে পেরে। সবাই আনন্দ করছে।
মাধকুন্ডে আসা পর্যটকদের ছবি তুলে দিয়ে রোজগার করেন জুয়েল আহমদ। করোনার কারণে জলপ্রপাত বন্ধ ঘোষণার পর বেকার হয়ে পড়েন তিনি। খুলে দেওয়ায় তার মনে অনেক আনন্দ। জুয়েল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করেছি। মাধবকুন্ড খুলে দেওয়ায় ভালো হয়েছে। এখন ছবি তুলে রোজগার করতে পারব। প্রথমদিন হওয়ায় মানুষ কম হয়েছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী কবির আহমদ বলেন, ‘মাধবকু- দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এতে পর্যটক না থাকায় আমাদের অনেক লোকসান হয়েছে। এখন এটি আবারও খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি আগের মতো পর্যটকরা বেড়াতে আসছেন। এতে বিকিকিনি একটু একটু করে বাড়ছে।’
মাধবকুন্ড পর্যটক সহায়ক ও উন্নয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে পর্যটকদের জন্য কাজ করি। যাতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়। সে জন্য একটি দল সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখে।’
পর্যটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ভানু লাল রায় বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা মাধবকুন্ড ঘুরছেন। প্রথম দিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মতো পর্যটক এসেছেন। তবে কয়েকদিন গেলে পর্যটক সংখ্যা বাড়বে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য আমরা কাজ করছি।