বেওয়ারিশ কুকুর আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৬ অক্টোবর ২০২০, ৫:২৪ অপরাহ্ণ
আতঙ্কের নাম কুকুর। মৌলভীবাজার শহর ভোরে থাকে বেওয়ারিশ কুকুরের দখলে। এতে করে প্রতিনিয়ত মানুষ আতঙ্কে থাকেন। গত পাচ দিনে অন্তত বিশজন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে জলাতঙ্ক টিকা নিয়েছেন। দিন দিন কুকুরে কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ বাড়ছে।
মৌলভীবাজার পৌর এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবে পথচারী থেকে শুরু করে বাজারে-বন্দরে লোকজন রীতিমতো আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করে। পৌর এলাকায় কুকুরের কামড়ে অনেক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। ভোরে বয়স্ক পথচারিরা শরীরচর্চায় বের হলে প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকেন।
প্রকৌশলী মনসুরুজ্জামান বলেন, কুকুরের জন্য রাস্তায় বের হলে কোন নিরাপত্তা নেই। হঠাৎ করেই একটা কুকুর এসে কামড় দেয়। এবিষয়ে পৌর মেয়রকে অবগত করেছি। কিন্তু তিনি হাইকোর্টে রিট করার পরামর্শ দিয়েছেন। শহরের বাসিন্ধা ফখরুল ইসলাম বলেন, সকালে সাইকেল নিয়ে রাইডিং এ বের হতাম। কিন্তু এখন এতই কুকুর বেড়েছে যে, সাইকেল নিয়ে বের হলেই কুকুর হামলা চালায়।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এবছর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১হাজার লোক জলাতঙ্কের টিকা নিয়েছেন। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ২২৫জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৬০ জন, মার্চ মাসে ১৫০ জন, এপ্রিল মাসে ৫০জন, মে মাসে ২০ জন, জুন মাসে ৫০জন, জুলাই মাসে ৬৫জন, আগস্ট মাসে ৭৫জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ১০৫জন জলাতঙ্কের টিকা নিয়েছেন।
মৌলভীবাজার হাসপাতালের অফিস সহায়ক সাগর আহমদ বলেন, ‘ইদানিং শহরের অনেক কুকুর লোক কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে টিকা নিতে আসছেন। জলাতঙ্ক রোগের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৫জন টিকা নেন। আগের তুলনায় এখন বেড়েছে’।
হঠাৎ করেই বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই জেলার কোথাও না কোথাও জলাতঙ্ক কুকুরের কামড়ে ও আঁচড়ে আক্রান্ত হওয়ার খবর রয়েছে। রাস্তা-ঘাট, পথ-ঘাট ও অলিগলি বেওয়ারিশ কুকুর দখলে রেখেছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, কুকুর নিধন না করার জন্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যা কারণে নিধন করা সম্ভব হচ্ছে না। কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণ টিকা পৌরসভার পক্ষ থেকে দেয়া হলো। কিন্তু দেখা গেল পৌর এলাকার বাহিরের অঞ্চল থেকে কুকুর এসে শহরের চলে আসলো, এতে করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার জানান, আসলে কুকুর নিধন করা যাবে না। যারা কুকুর পালন করে তারা জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যাপস্টেশন ও পিল খাওয়ান। বেওয়ারিশ কুকুরের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগ ভ্যাকসিন দেয়। সরকারি প্রোগ্রামের মাধ্যমে কুকুরকে কালারিং করা হয়। যারা কুকুর পালন করেন তারা আমাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন নেন। বেওয়ারিশ কুকুর জলাতঙ্ক না ছড়ানোর ব্যাপারটা স্বাস্থ্য বিভাগ দেখে।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. তওহীদ আহমদ বলেন, যারা কুকুর পালন করেন, তাদেরই দায়িত্ব হচ্ছে কুকুরকে টিকা দেয়া ও নিয়ন্ত্রণে রাখা। এটা তাদের নাগরিক দায়িত্ব। এসময়টা কুকুর বাচ্চা প্রসব করে, তাই কাছে গেলে মানুষকে কামড়াবে। কুকুর যাতে জলাতঙ্ক রোগ না ছড়ায় সে জন্য দুইবছর আগে একটি প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। সরকার সামনে কোন প্রকল্প দিলে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।