কাশিমপুর পাম্পহাউজের পানি নিষ্কাশন : দুইপক্ষের পাল্টাপাল্টি আবেদন
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৬:১৯ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার ::
মৌলভীবাজার জেলার হাওর কাউয়াদিঘি পাড়ের কৃষকদের এক পক্ষের দাবী এখন হাওর ঘেরা বাঁধের ভিতর পানি লেভেল বৃদ্ধি পেলে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে। অন্য পক্ষের দাবী বোরো ফসলের জমিতে আটকে পড়া কচুরিপানা (জার্মনি পানা) বের করে দিতে হলে পানির লেভেল কিছুটা বাড়াতে হবে নতুবা বোরা চাষের ক্ষতি হবে। উভয়পক্ষ মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বার্ড কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড উভয় পক্ষ যাতে ক্ষতিগস্থ না হয় সেই ব্যবস্থার কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী।
মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার একাংশ এবং রাজনগর উপজেলা নিয়ে হাওর কাউয়া দিঘি এলাকায় মনু সেচ প্রকল্প। এই প্রকল্প এলাকায় কাউয়া দিঘি হাওর ঘেরা বাঁধের ভিতরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কাশেমপুর এলাকায় পাম্প হাউস স্থাপন করা হয়। কিন্তু এটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন এবং হওর পাড়ের কৃষকদের নানা অভিযোগ থাকায় প্রকল্প এলাকায় ধান চাষে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ কম ছিল। তাই প্রকল্প এলাকায় ধান চাষের লক্ষমাত্রা অতীতে কোন বছরই বাস্তবায়ন হয়নি। সম্প্রতি পাম্প হাউসের নতুন পাম্প বসানোর পর এবারই প্রথম হাওরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। এই কারণে এবার মনু সেচ প্রকল্প এলাকার ৩৫ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বাড়তি চাষাবাদ হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এই সময় কোন প্রকৃতিক দূর্যোগ না হলে ৩০ হাজার টন রোপা আমন ধান উ্ৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। অপর দিকে কৃষকরাও কৃষি ক্ষেতে মনোযোগি হওয়ার পিছনে কাজ করছে করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের অন্যান্য আয় কমে যায় অনেকে কৃষিকেই অবলম্বন হিসাবে দেখছেন।
এদিকে প্রকল্প এলাকায় কাশিমপুর পাম্প হাউসের পাম্প এবার সচল থাকায় কাউয়াদিঘি হাওর এলাকায় এবার বেশি (ভাসান) পানি তেমন বাড়েনি ভরা মৌসুমে। এই কারণে কৃষকের বোরো ধানের জমিতে কচুরিপানা (জার্মনি পানা) আটকে আছে। ভাসান পানি থাকলে অন্যান্যবার এমনিতেই এই কচুরিপানা হাওর থেকে বের হয়ে যেতো ভাটার পানির টানে। কিন্তু এবার সেই বাস্তবতা না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন বোরো চাষিরা। এনিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজার কার্যালয়ে এক পক্ষ আবেদন করেছেন কচুরিপানা বের করে দিয়ে হাওরে পানির লেভেল বৃদ্ধি করার জন্য। অপরদিকে আজ ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার হাওর এলাকার সমস্যা নিয়ে কাজ করা ইটা ইসলামী সমাজকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে আরেকটি আবেদন জমা দিয়েছেন।
আবেদনে দাবি করা হয়েছে এ বছর প্রকল্পভুক্ত এলাকায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বাড়তি চাষাবাদ হয়েছে। ফলে ৩০ হাজার টন অধিক ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় কৃষকের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার জন্য এবং ফসল রক্ষার জন্য পাম্প হাউসের চলমান সেচ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে। এখনই হাওরে পানির লেভেল বৃদ্ধি করলে রোপা আমনের ক্ষতি হবে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী উভয় পক্ষের আবেদনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অনেক বছর পর হাওরেরর বেশিরভাগ কৃষি জমি আবাদের আওতায় এসেছে এবার পাম্প হাউস চালু রেখে হাওরে পানির লেভেল ঠিক রাখার কারণে। অপরদিকে কিছু কৃষকের বোরো জমিতে কচুরিপানা জমেছে ঠিক। বোরো ফসলের আগে এখনো সময় আছে। তাছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানির লেভেল হাওরের পানির লেভেলের নিচে আসলে তখন সিক্স ব্যান্ড রিং খুলে দেয়া যাবে। তারপরও চিন্তা করা হচ্ছে উভয় পক্ষের ক্ষতি না করে এমনভাবে পানির লেভেল ফিক্স করে দেয়ার।