কুলাউড়ায় প্রতিবন্ধী দুই শিশুকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৮:১৮ অপরাহ্ণ
মো. নাজমুল ইসলাম, কুলাউড়া ::
কুলাউড়ায় প্রতিবন্ধী দুই শিশুকে নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন দুই শিশুর পরিবার। জন্মের পর থেকেই এই দুই শিশু প্রতিবন্ধী হিসেবে বেড়ে উঠলেও এখনো তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোন প্রতিবন্ধী ভাতা। একজন শিশু জন্মগতভাবে মুখাবধি হাত পা বিকালাঙ্গ এবং আরেক শিশু জন্মের পর থেকে পেরালাইজড হয়ে পা থেকে কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে আছে।
সরজমিনে দেখা যায়, কুলাউড়া উপজেলা রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কৌলা গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী ও রহিমা বেগমের মেয়ে শিমলা আক্তার (১২) জন্মগত প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরে পড়ে আছে। একই গ্রামের রহমান মিয়া ও রহিমা দম্পতির ঘরে রাকিব মিয়া (৭) নামে একটি ছেলে জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী হিসেবে রয়েছে। কিন্তু সমাজসেবা অধিদপ্তর বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আজও এই দুই প্রতিবন্ধী শিশুর ভাগ্যে জুটেনি কোন প্রতিবন্ধী ভাতা। প্রতিবন্ধী উভয় শিশুর অভিভাবকরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
প্রতিবন্ধী শিমলা আক্তারের মা রহিমা বেগম কান্না কণ্ঠে বলেন, ‘মেয়েটির বাবা অনেক আগে মারা গেছেন। অনেক অভাবের সংসার অন্য সন্তানদের নিয়ে চলতে গিয়ে নানা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার উপর প্রতিবন্ধী এই মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে মহাচিন্তায় আছি। প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে একটি ভাতার কার্ড দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে বারবার ধরনা দিলেও আজ পর্যন্ত কোন সরকারি, বেসরকারি ভাতা দেওয়া হয়নি।’
একই গ্রামের অপর প্রতিবন্ধী শিশু রাকিব মিয়ার পিতা রহমান মিয়া বলেন, ‘জন্মগত ভাবে রাকিব প্রতিবন্ধী তার পা থেকে কোমর পর্যন্ত অবশ হয়ে আছে। সাত বছর থেকে তাাকে অনেক পরিচর্যা ও যতœ করে আসছি কিন্তু রাকিবকে ভাল করে তুলতে পারিনি। নানা টানাপোড়নের সংসার হওয়ায় টাকার অভাবে ভাল ডাক্তারও দেখাতে পারছি না। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের পাশাপাশি অনেক বিত্তশালীদের কাছে চিকিৎসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নিরুপায় হয়ে প্রতিবন্ধী এই শিশুটিকে অনেক কষ্টে আছেন তিনি। প্রতিবন্ধী উভয় শিশুর অভিভাবকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছে প্রতিবন্ধী দুই শিশুর সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার জন্য দৃষ্টি কামনা করেন।
রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ঈসমাইল হোসেন বলেন, আমি বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য মোট ১২টি নাম দিয়েছিলাম চেয়ারম্যানের কাছে। পরে সেখান থেকে তিনটি নাম বাদ দেয়া হয়। তবে আগামীতে আমি তাদের ভাতার কার্ড দেওয়ার চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে রাউৎগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল বলেন, হয়তো ভুলে নামগুলো কাটা হয়েছে তবে আগামীতে আসলে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া সমাজসেবা কর্মকর্তা ইব্রাহিম জানান, বিষয়টি আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছ থেকে খোঁজ নিচ্ছি, এই দুই শিশু যদি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকে আর কোন ভাতা না পায় তাহলে তথ্য নিয়ে শীঘ্রই তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।