মনু প্রকল্পে রোপা আমন চাষাবাদে বিপ্লব
৩৫ হাজার মেট্রিক টন বাড়তি ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা
প্রকাশিত হয়েছে : ১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
প্রকল্প এলাকাভূক্ত রাজনগর এবং মৌলভীবাজার সদরের (একাংশ) ১১টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত সাবেকী জলাবদ্ধতামগ্ন ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ
বিশেষ প্রতিবেদক ::
জলাবদ্ধতার অভিশাপ মুক্ত হওয়ায় চার দশকের রেকর্ড ভঙ্গকরে চলমান রোপা আমন মৌসুমে মনু প্রকল্পে ধান চাষাবাদে বিপ্লব সংগঠিত হচ্ছে। বালাই আপদ না থাকলে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে মনু প্রকল্প এলাকাতে ৩৫ থেকে চল্লিশ হাজার মেট্রিক টন বাড়তি ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
১৯৭৭-৭৮ সনে মনু প্রকল্প চালু হবার পর প্রকল্প এলাকার প্রতিবৎসর তিনটি মৌসুমে ধান চাষাবাদের সম্ভাবনা দেখা দিলেও বাঁধ কাটা বন্যা, জলাবদ্ধতা জনিত প্লাবন ও কাশিমপুর পাম্প হাউজের অক্ষমতার ফলে তিন ফসলী টার্গেট ব্যাহত হচ্ছিল প্রতিবছর। শুষ্ক মৌসুমে সেঁচব্যবস্থার মাধ্যমে চাষাবাদই প্রধান উপজীব্য হয়ে উঠে। মনু প্রকল্পভূক্ত নিম্নাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে রোপা আমন ধান চাষাবাদের লক্ষমাত্রাও পূর্ণ হচ্ছিল না জলাবদ্ধতার কারণে। বোনা আমনের পাশাপাশি গত দুই দশক ধরে প্রকৃতিগতভাবে শাইলজমির চাষাবাদও অনেক এলাকায় ব্যাহত হচ্ছিল। কাশিমপুর পাম্প হাউজের পানি নিষ্কাশন সক্ষমতা হ্রাস পাওয়াতে কাক্সিক্ষত রোপা আমন এবং বোনা আমন চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় প্রকল্প এলাকার কৃষক মহলে অসন্তোষ এবং হতাশা জেঁকে বসে। এবার তার ব্যতিক্রম। গত ২০১৯ সনে কাশিমপুর পাম্প হাউজের পুরানো মেশিনগুলো অপসারণ করে নতুন মেশিন বসানো হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষক মহলের নানামুখী কর্মসূচির ফলশ্রুতিতে। এমতাবস্থায় গত বছর থেকেই প্রকল্প এলাকায় জলাবদ্ধতার ধকল কমে আসে। কোন কোন ইউনিয়নে বাড়তি চাষাবাদও সম্পন্ন হয়েছিলো। জলাবদ্ধতা আর থাকবেনা এই আশাবাদ এবং ধারণা থেকে এবার দৃশ্যপট পাল্টে যায়। প্রকল্প এলাকাভূক্ত রাজনগর এবং মৌলভীবাজার সদরের (একাংশ) ১১টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত সাবেকী জলাবদ্ধতামগ্ন ৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য বছর যে সমস্থ ধানী মাঠে কচুরীপানা এবং আগাছার জঙ্গঁল লেগে থাকতো, সেই মাঠগুলোতে উঠতি রোপা আমনের জাগরণ লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে সদর এবং রাজনগর উপজেলাতে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী প্রতি হেক্টরে ৫ টন করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকায় মনু প্রকল্পের সাবেকী বোনা আমন জমিতে আবাদকৃত ৭ হাজার হেক্টর রোপা আমনের উৎপাদন হবে বাড়তি ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান। তবে উৎপাদন আরও বাড়তে পারে। ভাদ্রমাসের শেষ পর্যন্ত পানির নিচ থেকে জেগে উঠা জমিতে চাষাবাদ অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
প্রকল্পভূক্ত আখাইলকুড়া ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামের আরজু মিয়া এবং পারা শিমুল গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, গত ৫০ বছরে যা ছিলো অসম্ভব, এবারে তা সম্ভব হয়েছে। কোনদিন ভাসান জমি বলে খ্যাতি বোনা আমন মাঠে শাইল চাষাবাদ হয়নি। কিন্তু এবার তা হচ্ছে। এ যেনো যুগান্তর। মানুষ তাই অন্যান্য এলাকা থেকে হালি চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদে নেমে পড়েছে উৎসাহ নিয়ে।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্ত্তী বলেন, মনু প্রকল্প নিয়ে শুরু থেকেই নেতিবাচক ধারণা ছিলো। এবার তার ব্যাতিক্রম আনতে পেরেছি। নতুন পাম্প মেশিন স্থাপনের পর পাম্প হাউজের পানি নিস্কাশন সরাসরি মনিটরিং করে ২৪ ঘণ্টাই মেশিনগুলোকে সচল রেখেছি। তবে এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিলো। পানি সেঁচ বন্ধ রাখার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ এসেছিলো তাদের স্বার্থে। কিন্তু সেটি উপেক্ষা করা হয়েছে। তাছাড়া গত বারের চাইতে এবার প্রকল্প এলাকায় দ্বিগুণ চাষাবাদের তাগিদও ছিলো উপর মহল থেকে।