‘বিষাদ সিন্ধু’ নিয়ে দুটি কথা ।। রাজন আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২০, ১:২৭ অপরাহ্ণ
”বাংলা সাহিত্যে বিষাদ সিন্ধুর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। সাহিত্য অঙ্গন থেকে শুরু করে একেবারে সাধারণ পাঠক পর্যন্ত সবাই বিষাদ সিন্ধুতে মুগ্ধ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিষাদ সিন্ধু ভিনদেশীদেরও আকৃষ্ট করেছে।”
‘বিষাদ সিন্ধু’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বহুল পঠিত উপন্যাস। কারবালার নির্মম ট্রাজ্যেডিকে কেন্দ্র করে মীর মোশারফ হোসেন উপন্যাসটি লিখেছেন। কিন্তু কারবালার প্রকৃত ইতিহাসকে পাশ কাটিয়ে মীর মোশাররফ হোসেন অসংখ্য কল্প কাহিনীর মাধ্যমে ইতিহাসের সত্য ও ন্যায়ের মহান বিপ্লবকে বিকৃত করেছেন। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর মহান আত্মত্যাগ শুধু মুসলমানদের জন্য প্রেরণা নয় বরং দুনিয়ার সকল ধর্মের মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিতে প্রেরণা যোগাচ্ছে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে যুগে যুগে অনেক বিপ্লবী জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন কিন্তু ইমাম হোসাইন (রা.) এর মত কোন বিপ্লবীর দেখা ইতিহাসে পাওয়া যায় না। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এমন এক আত্মত্যাগী বিপ্লবী যিনি নিজের জীবন, সঙ্গীসাথীদের জীবন এমন কী নিজের দুধের বাচ্ছাটির জীবনও সত্য প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ করেছেন। কারবালার সত্য ইতিহাস যেখানে পাথর হৃদয়কে কাঁদায়; সেখানে মিথ্যা কল্পকাহিনী নিষ্প্রয়োজন। এরপরও কল্পনার তুলি দিয়ে যে কোন ঘটনা উপস্থাপনের অধিকার লেখক, কবি সাহিত্যিকের থাকলেও কল্পনার তুলির ছোঁয়ায় কারো চরিত্র হননের অধিকার কোন লেখকের নেই। দায়বদ্ধতা বলে যে একটি কথা আছে তা একজন লেখকের অবশ্যই থাকতে হয়।
বাংলা সাহিত্যে বিষাদ সিন্ধুর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। সাহিত্য অঙ্গন থেকে শুরু করে একেবারে সাধারণ পাঠক পর্যন্ত সবাই বিষাদ সিন্ধুতে মুগ্ধ। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিষাদ সিন্ধু ভিনদেশীদেরও আকৃষ্ট করেছে। এই তো সেদিন দেখলাম ভারত থেকে বিষাদ সিন্ধু ইংরেজি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। সংস্করণ এবং প্রকাশনার দিক দিয়েও বিষাদ সিন্ধু সর্বাগ্রে। বিষাদ সিন্ধুই বাংলা সাহিত্যে মীর মোশাররফ হোসেনকে অমর করে রেখেছে। বিষাদ সিন্ধু প্রকাশের ১২৫ বছর পরও মীর মোশাররফ হোসেনের জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকীতে মিডিয়ায় বলা হয়, আজ বিষাদ সিন্ধু লেখকের জন্ম বা মৃত্যুবার্ষিকী!
শাহ গরীবুল্লাহর জঙ্গনামা থেকে বিষাদ সিন্ধু :
শাহ গরীবুল্লাহ রচিত জঙ্গনামা থেকে মীর মোশাররফ হোসেন বিষাদ সিন্ধুর কাহিনী নকল করেছেন। জঙ্গনামার বিতর্কিত বিষয়গুলিই বিষাদ সিন্ধুতে মীর সাহেব ধারাবাহিকভাবে এনেছেন। জঙ্গনামা আর বিষাদ সিন্ধু পাঠ করে ভাষাগত বর্ণনা ব্যতিত আর কোন পার্থক্য আমার চোখে ধরা পরেনি। বিষাদ সিন্ধুকে অনেকে ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস বলে দাবি করে থাকেন। কিন্তু ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থগুলোর বর্ণনায় প্রমাণ হয় বিষাদ সিন্ধু সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি উপন্যাস। কারবালার সত্য ইতিহাস আর বিষাদ সিন্ধুর মাঝে রাতদিন পার্থক্য বিদ্যমান। কয়েকটি ঐতিহাসিক নামের ব্যবহার এবং হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর কাফেলা কারবালা ময়দানে যাওয়া ব্যতীত বিষাদ সিন্ধুতে কারবালার সত্য ইতিহাসের আর কিছু পাওয়া যায় না। সুতরাং বিষাদ সিন্ধুর লেখক মীর মোশাররফ যতই ইতিহাসের দোহাই দেন না কেন; বিষাদ সিন্ধুকে কখনই ইতিহাস নির্ভর বলা যায় না। বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসটি হল মীর মোশাররফ হোসেনের কল্পনাপ্রসূত রচনা। যাতে অসংখ্য বানোয়াট কল্পকাহিনীতে ভরপুর। কারবালার সত্য ইতিহাসকে পদদলিত করে বিষাদ সিন্ধুতে কারবালার ঘটনার বিকৃতরূপই উপস্থাপন করা হয়েছে।
তবে বিষাদ সিন্ধুর সাহিত্যমান নিয়ে প্রশ্ন তোলার দুঃসাহস আমার নেই। বিষাদ সিন্ধু পাঠ করে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য! শব্দের চমৎকার গাঁথুনি দিয়ে একের পর এক ঘটনা সাজিয়ে বিষাদ সিন্ধু রচনা করে মীর মোশাররফ পাঠককে এতোটাই আকৃষ্ট করেছেন যে, কেউ যদি বিষাদ সিন্ধু পাঠ করা শুরু করে তাহলে শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাবেন না! কাল্পনিক কাহিনীগুলো এনে মীর মোশাররফ হোসেন পাঠকের পালসের গতি বাড়িয়েছেন এবং কাঁদিয়েছেন। একজন লেখকের কল্পনা শক্তি কত গভীরে যেতে পারে বিষাদ সিন্ধু পাঠ করলে যে কেউ বুঝতে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, যে সাহিত্য মহান ব্যক্তিদের চরিত্রের উপর অপবাদের তিলক রেখা এঁকে দেয় সেই সাহিত্য কি দায়বদ্ধতার মানদন্ডে প্রশ্নবিদ্ধ হয় না? সাধারণ পাঠক তো আর সাহিত্যিক নয় যে তারা বিষাদ সিন্ধুকে সাহিত্যের দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করবে।
“কয়েকটি ঐতিহাসিক নামের ব্যবহার এবং হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর কাফেলা কারবালা ময়দানে যাওয়া ব্যতীত বিষাদ সিন্ধুতে কারবালার সত্য ইতিহাসের আর কিছু পাওয়া যায় না। সুতরাং বিষাদ সিন্ধুর লেখক মীর মোশাররফ যতই ইতিহাসের দোহাই দেন না কেন; বিষাদ সিন্ধুকে কখনই ইতিহাস নির্ভর বলা যায় না। বিষাদ সিন্ধু উপন্যাসটি হল মীর মোশাররফ হোসেনের কল্পনাপ্রসূত রচনা”
মীর মোশাররফ হোসেনের কলম কী পরিমান ক্ষুরধার ছিল তা বিষাদ সিন্ধুতেই ফুটে উঠেছে। ধারালো তরবারি নিমেষেই যেমন সবকিছু চুরমার করে দিতে পারে মীর মোশাররফ হোসেনের কলমটি ঠিক সেভাবেই কারবালার ঐতিহাসিক বিপ্লবকে বিকৃত করেছে এবং সুকৌশলে আল্লাহর প্রিয় হাবীব (সা.) এর আহলে বায়তের সদস্যদের চরিত্রে কালিমা লেপন করেছে। প্রতিভা আছে বলেই যা ইচ্ছা তাই করা যায় না কিন্তু মীর সাহেব বিষাদ সিন্ধুতে তাই করেছেন। বিশ্ব মুসলিমের আবেগ আর ভালবাসা যে নামগুলোর সাথে মিশে আছে সে নামগুলো নিয়েই মীর সাহেব সাহিত্যে খেলা খেলে নিজের কলমের প্রতিভার ঝলক দেখালেন! আর অবশ্যই সে ঝলক ছিল বিকৃত, বিশ্রী এবং পীড়াদায়ক।
বিষাদ সিন্ধুতে লেখক এমন কিছু শব্দ এনেছেন, যা যে কোন মুসলমান পাঠকের কাছে চরম অস্বস্তিকর! যেমনÑ মহান আল্লাহকে ইশ্বর, পরমেশ্বর, জয় জগদিশ, ভগমান বলা, নবী (সা.) কে প্রভু, সূর্যকে সূর্যদেব, সন্ধ্যা বেলাকে সন্ধ্যা দেবী, সম্মানিতকে পূজনীয় ইত্যাদি বলা। যা পাঠ করে যে কোন সচেতন পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক যে, মীর মোশাররফ হোসেন তুমি কার?
মীর মোশাররফ হোসেন চাইলে বিষাদ সিন্ধুকে নিয়ে বিকল্প পথেও হাঁটতে পারতেন। তিনি কারবালার সত্য ইতিহাসকে ধারণ করে ইতিহাসের নিরিখেই উপন্যাসটি লিখতে পারতেন। পাকিস্তানের বিখ্যাত সাহিত্যিক এনায়েতুল্লহ আলতামাশ যেভাবে প্রখ্যাত সাহাবী, মহাবীর হযরত খালিদ বিন ওলিদ (রা.) এর বীরত্বের ইতিহাস নাঙ্গা তলোয়ার (১) এবং নাঙ্গা তলোয়ার (২) উপন্যাসে তোলে এনেছেন ঠিক সেভাবে মীর সাহেবও বিষাদ সিন্ধুতে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর মহান আত্মত্যাগ এবং বিপ্লবের ইতিহাস তোলে আনতে পারতেন। কারণ প্রতিভার দিক দিয়ে মীর সাহেব ছিলেন এগিয়ে। কী এমন ক্ষতি হত যদি মীর মোশাররফ হোসেন প্রকৃত ইতিহাসকে পাশ না কাটিয়ে ইতিহাসের নির্মোহ সত্য বিষাদ সিন্ধুতে তোলে আনতেন।
পাঠ্যপুস্তকে বিষাদ সিন্ধুর উপস্থিতিই বিষাদ সিন্ধুর প্রতি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আস্থা এবং বিশ্বাস সৃষ্টি করছে। শিক্ষার্থীদের কোমল হৃদয়ে বিষাদ সিন্ধুর মাধ্যমে যেভাবে কারবালার মিথ্যা কল্পকাহিনী গেঁথে যাচ্ছে তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর মহান আত্মত্যাগ থেকে যেখানে আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নেওয়ার কথা সেখানে শিক্ষার্থীরা মিথ্যা কিছু কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছে না। যে সকল শিক্ষার্থী কারবালার সত্য ইতিহাস না জানবে এবং আলেমদের কাছ থেকেও কারবালার সত্যিকার ঘটনা জানার সুযোগ পাবে না তারা তো পাঠপুস্তকের বিষাদ সিন্ধুর কাহিনীকেই বিশ্বাস করবে।
মীর মোশাররফ হোসেন চাইলে বিষাদ সিন্ধুকে নিয়ে বিকল্প পথেও হাঁটতে পারতেন। তিনি কারবালার সত্য ইতিহাসকে ধারণ করে ইতিহাসের নিরিখেই উপন্যাসটি লিখতে পারতেন। পাকিস্তানের বিখ্যাত সাহিত্যিক এনায়েতুল্লহ আলতামাশ যেভাবে প্রখ্যাত সাহাবী, মহাবীর হযরত খালিদ বিন ওলিদ (রা.) এর বীরত্বের ইতিহাস নাঙ্গা তলোয়ার (১) এবং নাঙ্গা তলোয়ার (২) উপন্যাসে তোলে এনেছেন ঠিক সেভাবে মীর সাহেবও বিষাদ সিন্ধুতে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর মহান আত্মত্যাগ এবং বিপ্লবের ইতিহাস তোলে আনতে পারতেন।
বিষাদ সিন্ধু নিয়ে আলেমদেরও অনেক দায় আছে বলে মনে করি। কারণ লক্ষ লক্ষ আলেমের পদধূলিতে ধন্য বাংলার বড় একটি অংশের মানুষ এখনও বিষাদ সিন্ধুকেই কারবালার সত্য ইতিহাস বলে বিশ্বাস করে আছে। শুধু যে সাধারণ মানুষ বিষাদ সিন্ধুকে গ্রহন করেছে তা নয় একজন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষের মুখে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর শাহাদতের আলোচনায় যখন বিষাদ সিন্ধুর বানোয়াট কাহিনী স্থান পায় তখন আমাদের মত ক্ষুদ্র মানুষ বিভ্রান্ত হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়? বিষাদ সিন্ধু নিয়ে আমাদের আলেমদের অবস্থানটা হল এমন যে, এটা একটি উপন্যাস তাই এটা নিয়ে আর কী বলার আছে। কিন্তু যে মানুষগুলো বিষাদ সিন্ধুকেই কারবালার সত্য ইতিহাস বলে বিশ্বাস করে বসে আছে, তাদের ভুল ভাঙানোর দায়িত্ব তো আলেমদেরই নিতে হবে। তাই বিষাদ সিন্ধু নিয়ে মানুষের সামনে বিস্তারিত আলোচনা এবং লেখালেখির প্রয়োজন রয়েছে।
বিষাদ সিন্ধুতে যে বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে :
১. কারবালার ঘটনার সমস্ত দায়বার মহান আল্লাহ তায়ালার উপর চাপানো। অর্থাৎ ‘ইশ্বরের লীলা’ বলে মীর মোশাররফ হোসেন যেভাবে কারবালার মিথ্যা কল্পকাহিনী বর্ণনা করেছেন, তাতে সকল দায়বার মহান আল্লাহর উপরই চাপানো হয়েছে।
২. একজন নারীকে কেন্দ্র করেই কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। ৩. হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতেই কারবালায় গিয়েছিলেন।
বিষাদ সিন্ধুর পাঠকদের সন্দেহ নিরসনে সংক্ষেপ কিছু কথা :
হযরত মুয়াবিয়া (রা.) এর জীবদ্দশাতেই ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। সুতরাং ইয়াজিদের রাজত্বকালে ইমাম হাসান (রা.) জীবিত ছিলেন না। মুহররম পর্বে বর্ণিত ইমাম হাসান (রা.) এর সাথে কথিত আব্দুল জাব্বারের স্ত্রীর বিয়ের ঘটনা, মদীনার সেনাবাহিনীর সাথে ইয়াযীদের সেনাবাহিনীর যুদ্ধ এবং কারবালায় ময়দানে হযরত কাসেম (রা.) এর সাথে হযরত সকিনা (রা.) এর বিয়ের বিষয়টি একেবারেই বানোয়াট।
হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর হত্যাকারী পাপিষ্ঠ সিমারের বুকে লোম না থাকা এবং সিমারের সাথে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এই বলে ওয়াদাবদ্ধ হওয়া যে, আল্লাহ সিমারকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (রা.) বেহেশতে প্রবেশ করবেন না। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
উদ্ধারপর্বে বর্ণিত হযরত সকীনা (রা.) এর আত্মহত্যা, ইমাম হোসাইন (রা.) এর শির মোবারকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, হযরত ফাতিমার (রা.) এর জীবদ্দশায় হযরত আলী (রা.) অন্য নারীকে বিয়ে করা, মুহাম্মাদ ইবনে হানাফীয়ার সাথে ইয়াযীদের যুদ্ধ এবং ইমাম যায়নুল আবেদীন (রা.) এর পলায়নের ঘটনা সম্পূর্ণরূপে কাল্পনিক।
এজিদ বধ পর্বে বর্ণিত যুদ্ধে ইয়াযীদের পরাজয় ও গুপ্তপুরীতে প্রবেশ এবং মুহাম্মাদ ইবনে হানাফীয়ার কিয়ামত পর্যন্ত প্রস্তর বেষ্টিত পাহাড়ের মধ্যে বন্দি থাকার ঘটনাও কাল্পনিক।
সাহিত্যের একজন ক্ষুদ্র পাঠক হয়ে আমিও বিশ্বাস করি যে, কল্পনা দোষের কিছু নয়। কল্পনাই সাহিত্য সৃষ্টি করে। কল্পনা শক্তি দিয়েই একজন লেখক সাগরকে পাহাড় বানান আবার পাহাড়কে সাগর বানান। কল্পনার মাঝেই তো সাহিত্যের সৌন্দর্য লুকানো থাকে। লেখকের কল্পনা দিয়েই সাহিত্যের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। কিন্তু এই কল্পনা যখন কারো চরিত্রহনন করে; কারো চরিত্রে অপবাদের বিষ ঢেলে দেয় তখন সেই সাহিত্য সত্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়!
অনুল্লেখিত গ্রন্থের দোহাই দিয়ে দিয়ে মীর মোশাররফ হোসেন কোটি কোটি মুমিন-মুসলমানের আবেগ আর ভালবাসার প্রিয় মানুষগুলির চরিত্র যেভাবে হনন করেছেন, তা যে কোন মূল্যায়নেই অত্যন্ত বেদনাদায়ক! বলতে দ্বিধা নেই, মীর সাহেব সুকৌশলে বিষাদ সিন্ধুর রন্ধ্রে, রন্ধ্রে মিথ্যা অপবাদের সিন্ধুও ছড়িয়ে দিয়েছেন। আহ! ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে মজলুম ছিলেন। যুগে যুগে কিছু মানুষের কলম আর জিহ্বার কাছেও মজলুম!
রাজন আহমদ : সাধারণ সম্পাদক, ইটা ইসলামি সমাজকল্যাণ সংস্থা, মৌলভীবাজার।