শিক্ষায় উন্নয়ন ভাবনা : মৌলভীবাজার প্রেক্ষিত
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, ৭:২০ অপরাহ্ণ
খায়রুন নাহার
ভূমিকা:
শিক্ষা হল শৈশব থেকে পূর্ণ বয়স পর্যন্ত মানব সন্তানেরদৃষ্টিভঙ্গীর ইতিবাচক বিকাশ পদ্ধতি। শিক্ষার গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী ও বহুবিধ।শিক্ষা সর্বকালে সভ্যতা ও অগ্রগতির ধারক ও বাহক হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। মূলতশিক্ষাই হচ্ছে সকল উন্নয়নের মূলভিত্তি। মানবসম্পদ উন্নয়ন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও বহুমতের সহাবস্থানসহ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষিত, দক্ষ ও সুশীল মানবসমাজ একটি রাষ্ট্রকে নিয়ে যেতে পারে উন্নতির চরম শিখরে। আশার কথা গত এক দশকে বাংলাদেশে শিক্ষার সর্বস্তরেই চোখে পড়ার মত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একসময় বিপুল সংখ্যক কোমলমতি শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেতো না, পাবলিক পরিক্ষায় ছিল নকলের ছড়াছড়ি, ফল প্রকাশে অনেক দেরি হতো, ফল প্রকাশের পর দেখা যেতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, স্কুলে যথাসময়ে পাঠ্যবই পেতো না শিক্ষার্থীরা, লেখাপড়া বন্ধ করে বাল্যবিয়ের করালগ্রাসে নিপতিত হতো অনেক কিশোরী। সেই বিপর্যস্থ এবং অসহায় পরিবেশ থেকে এখন আমাদের অনেক উত্তরণ ঘটেছে। আমাদের মৌলভীবাজার জেলা ও এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। এখন সুধীজন ও দায়িত্বশীলদের কাছে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে মৌলভীবাজারের সাম্প্রতিক অবস্থা কী, অগ্রগতিই বা হয়েছে কতটুকু, সমন্বিত উপায়ে বিদ্যমান অবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে আমাদের দায়িত্বই বা কতটুকু।
ফিরে দেখা:
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহাসিক রূপান্তরের পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থান ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তাবলীর কারণে শিক্ষা ক্ষেত্রে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে মৌলভীবাজার। ১৭৬৫ সালে এই জনপদ বৃটিশ অধিকারে যাওয়ার পর তৎকালীন বঙ্গদেশের অন্তর্ভূক্ত ছিল ঢাকা বিভাগের অংশ হিসেবে। ১৮৩৬ সালে অফিস আদালতের ভাষা হিসেবে ফারসী বাতিল করা হলে এবং ইংরেজির প্রচলন শুরু হলে সিলেটের শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও বিপর্যয় নেমে আসে। এমনিতেই সাধারণ মানুষের জন্যে তখন শিক্ষার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত।বড়লাট লর্ড নর্থব্রæকের শাসনামলে ১৮৭৪ সালে এই অঞ্চল যুক্ত হয় আসাম প্রদেশের সাথে। ১৯৪৭ সালে আকার ও আয়তনে পরিবর্তিত হয়ে পূর্ব বাংলায় ৩০০ মাইলের ব্যবধানে চট্রগ্রাম বিভাগের সাথে অঙ্গীভূত হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল। ১৯৫১ সালে বৃহত্তর সিলেট জেলার শিক্ষিতের হার ছিল ২৪.৪%। ১০ বছর পর এখানে শিক্ষিতের হার কমে দাঁড়ায় ২০ শতাংশে। কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের শিক্ষিতের হার ছিল যথাক্রমে ২৪.৮, ২৪.৭, ২৬.৪, ২৭.২ এবং ২৪.৮ শতাংশ। বর্তমানে প্রশাসনিকভাবে সিলেট বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট হলেও মাঝখানে যাওয়া-আসার ছাপ পড়ে এখানকার জনজীবনে এবং তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মৌলভীবাজার জেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে। তাছাড়া বিস্তীর্ণ চা বাগান, হাওড়, পাহাড়, পুঞ্জী ইত্যাদি দুর্গম ও অনগ্রসর এলাকাগুলোও শিক্ষায় পশ্চাৎপদতার নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবর্তনের গল্প:
মৌলভীবাজার জেলায় ১৯৮২ সালে সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ২২%। ২০০১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী সাক্ষরতার হার ছিল মাত্র ৪২.০৬%। ঈযরষফ জরংশ গবধংঁৎব (ঈজগ) ২০০৩ অনুযায়ী বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে ইউনিসেফ ৫টি সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ১১ টি পশ্চাৎপদ বা কনভারজেন্স জেলা নির্বাচন করে। অনুর্ধ ৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তির নি¤œ হার, অস্বাস্থ্যকর পায়খানা ব্যবহার, হাম প্রতিষেধক গ্রহণের নি¤œ হার এবং লিঙ্গ বৈষম্য এই ৫টি সূচকের ভিত্তিতে নি¤œক্রম হতে পশ্চাৎপদ জেলাগুলো হচ্ছে সুনামগঞ্জ, ভোলা, মৌলভীবাজার, ঠাকুরগাঁও, জামালপুর, রংপুর, হবিগঞ্জ, নীলফামারী, কক্সবাজার, শেরপুর এবং কিশোরগঞ্জ। অর্থাৎ দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে মৌলভীবাজার জেলার অবস্থান ছিল ৬২তম। এরকম এক পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০৯ সাল থেকে ‘শিশুর বিকাশে প্রারম্ভিক শিক্ষা প্রকল্পের’ আওতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমী মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্যে ২০৯ টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র চালু করে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও কয়েকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান চা বাগান ও হাওড়সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যেই এর ইতিবাচক ফল দেখা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় এ জেলায়। দেখা যায় তখন মৌলভীবাজার জেলায় শিক্ষার হার দাঁড়ায় ৬১.০২ শতাংশ যখন জাতীয় পর্যায়ে এই হার ছিল ৬৩.৬ শতাংশ।
শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহ:
জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মৌলভীবাজার জেলায়শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসমূহ কাজ করছে। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় ১৮০টি বিদ্যালয়, ৬৯টি মাদ্রাসা, ২৫টি কলেজ এবং ১৩টি স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৯৭৯ জন শিক্ষক এবং ২১৯২৫৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
মৌলভীবাজার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় মোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৪৮টি, পিটিআই ও শিশু কল্যান ট্রাস্টসহ এই সংখ্যা ১০৫০। এছাড়াও কেজি স্কুল রয়েছে ৩৬৭টি, এবতেদায়ী ৭৮টি, উচ্চ মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ঠ ৭০টি, আনন্দ স্কুল ২০৮টি, এনজিও কেন্দ্র ৫৫৯টি ও এনজিও পূর্ণ স্কুল ১৩টি। নীট ভর্তির হার ৯৯.৭৬(মেয়ে-৯৯.৭৮, ছেলে-৯৯.৭৫) শতাংশ এবং ঝরে পড়ার হার ১৪ শতাংশ। চা বাগানে ৬০টি এবং হাওরে রয়েছে ৩৪টি স্কুল। জেলায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩,৪৬৮জন। ১০০৪টি প্রধান শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৬৯৯ জন প্রধান শিক্ষক এবং ৪৮১৫টি সহকারী শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪৫৩৬ জন শিক্ষক।
ইসলামিক ফ্উান্ডেশন পরিচালনা করছে ৭৫৪টি শিক্ষা কেন্দ্র। বাংলাদেশ শিশু একাডেমী ব্র্যাকের মাধ্যমে বিভিন্ন চা বাগানে ১৩৫টি প্রাক-প্রাথমিক ও ৫০টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র পরিচালনা করছে। হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে ১৯৬টি শিক্ষা কেন্দ্র। উপানুষ্টানিক শিক্ষা অধিদপ্তর এলজিইডি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ব্র্যাকের পরিচালনায় রয়েছে ৩২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৫৯টি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র। আরডিআরএস শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায ৯টি শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করছে। উন্নয়ন সহায়ক সংস্থা এমসিডা
মৌলভীবাজার জেলায় শিক্ষার উন্নয়নে কিছু চ্যালেঞ্জ:
মৌলভীবাজার জেলায় চা বাগান রয়েছে ৯২ টি, ফাঁড়ি বাগানসহ এই সংখ্যা প্রায় ১৫০। লোকসংখ্যা ৪ লক্ষাধিক। স্কুল গমনোপোযোগী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ৬০টি, প্রয়োজনের তুলনায় যা অত্যন্ত অপ্রতুল। চা বাগানের মতই হাওর এলাকার অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। হাকালুকি, হাইল হাওর, কাউয়াদীঘি, পূবের হাওর এবং হাওর করাইয়া সবকিছু মিলে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র ৩৪ টি। উভয় এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলায় মোট গ্রামের সংখ্যা ২১২৮ টি। এর মধ্যে ৬০১টি গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। জরুরী ভিত্তিতে অন্তত দুই শতাধিক গ্রামে স্কুল স্থাপন করা না গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-৪ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে ৬৫টি পানপুঞ্জি। পর্যাপ্ত বিদ্যালয়ের অভাব এবং দূর্গম যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এখানকার খাসিয়া ও গারো শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা এবং সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিত এলাকাসমূহের সকল শিশুকে উপবৃত্তির আওতায় এনে সংশ্লিষ্ট এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন।অভিভাবক ও সুশীল সমাজকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে শিক্ষা সম্পর্কে সকলকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি এনজিও সমূহকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড-ডে মিল চালু করা প্রয়োজন।
বর্ষাকালে স্বাভাবিকভাবে ৫-৬ মাস হাওর এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। বন্যা হলে এ পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে দাাঁড়ায়। পানিতে ডুবে যায় হাওরের স্কুলগুলো। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তখন স্কুল ভবনগুলো পানিতে তলিয়ে গেলেও কিন্তু স্কুলের পাশের ঘরবাড়ীগুলো ডুবে যায় না। স্কুল ভবন নির্মাণের সময় আমাদের প্রকৌশল সংস্থাগুলোকে এ ক্ষেত্রে দুরদৃষ্টিসম্পন্ন মনোভাবের পরিচয় দেয়া উচিত।
মাঝখানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের গৃহীত উন্নয়ন মৌলভীবাজার জেলাকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। ইউনিসেফের পাশাপাশি ডবিøউওএইচও, ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক নানা ধরণের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ২০১১ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলাকে অন্তর্ভূক্ত করেই সম্পাদিত হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত হয়ে গেছে এমন ভুল তথ্যের উপর নির্ভর করে টঘউঅঋ (টহরঃবফ ঘধঃরড়হংউবাবষড়ঢ়সবহঃ অংংরংঃধহপব ঋৎধসবড়িৎশ)কর্মসূচির আওতায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহঈউও (ঈড়সঢ়ড়ংরঃব উবঢ়ৎরাধঃরড়হ ওহফবী)সূচকের ভিত্তিতে ২০১২-২০১৬ মেয়াদে নির্বাচিত ২০টি জেলায় তাদের সমন্বিত কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার ছাড়া অন্য ৩টি জেলাই এই কর্মসূচির সাথে অন্তর্ভূক্ত হয়। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সীমিত আকারে মৌলভীবাজার জেলায় কিছু কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এখানে অধিকহারে উন্নয়মূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কিছু অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত:
নারী শিক্ষার হার হ্রাস, স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নে সুযোগ কমে যাওয়াসহ নানাবিধ নেতিবাচক বিষয়ের জন্যে দায়ী বাল্যবিবাহ। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন বাল্যবিবাহের এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বরমৌলভীবাজার জেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করে। এর পূর্বেই মৌলভীবাজার জেলার ৬০৩টি ওয়ার্ড, ৬৭ টি ইউনিয়ন এবং ৭টি উপজেলাকে পর্যায়ক্রমে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়।
অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি মৌলভীবাজার। তবে এখানে আছে দুর্গম ও সুবিধাবঞ্চিত অনেক এলাকা, যেখানে কষ্টে বেড়ে উঠছে অগণিত শিশু। এই কষ্টকে জয় করেও অনেক শিশু শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ নানা ক্ষেত্রে তাদেও প্রতিভার স্ফূরণ ঘটিয়েছে। এইসব মেধাবী শিশুদের খোঁজে এনে জেলা প্রশাসন তাদের স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ১১ নভেম্বর ২০১৭। যে শিশুরা কোনভাবে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে আলো-আধারিতে লেখাপড়া করে বেড়ে উঠেছে জেলা প্রশাসনের বদান্যতায় সকল ভয়কে জয় করে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত শিশুদের সাথে মিলেমিশে নেচে-গেয়ে পাঁচ তারকা হোটেলে তারা সারা বেলা কাটিয়ে দিল। বিদায়ের সময় তাদের চোখেমুখে মুগ্ধতার রেশ আর অসীম কৃতজ্ঞতা। এসব দেখেশুনে তাদেও এলাকার অন্য শিশুরাও হবে অনুপ্রাণিত। বদলে যাবে তাদেও পরিবার, সমাজ। আরও এগিয়ে যাবে মৌলভীবাজার, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
মৌলভীবাজার জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ একটা অসাধারণ কাজ করেছে। স্কুলের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরির লক্ষ্যে স্কুল ভবনগুলোকে নানা রঙে সাজিয়ে অসম্ভব সুন্দর করে তোলা হয়েছে। সমাজের নেতৃস্থানীয় মানুষের মাধ্যমে কাজটা আদায় করতে গিয়ে শিক্ষকদের অনেক কষ্ট হলেও শিশুদের জন্যে একটা স্বপ্নপূরী বানাতে পেরে তাঁদের আত্মতৃপ্তি।
ডশক্ষা ক্ষেত্রে ‘আমার স্কুল, আমার দায়িত্ব’ কমলগঞ্জ উপজেলায় অনেক সাড়া ফেলেছে। স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যারা প্রবাসে আছেন অথবা রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁদেরকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে স্কুলের উন্নয়নে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে কেউ বা নগদ অর্থ দিয়ে, কেউ আসবাবপত্র বা শিক্ষা উপকরণ দিয়ে নিজের শৈশব-কৈশোরের স্কুলের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি স্তম্ভ শহীদ মিনার নির্মিত হচ্ছে সকল স্কুল প্রাঙ্গনে। সকল শিশুর হাতে টিফিন বক্স তুলে দেয়া হয়েছে। মিড-ডে মিলের পাশাপাশি বাসা থেকে খাবার আনতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সততা স্টোর চালু হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিশুরা নিজেরাই তৈরি করছে ডাস্টবিন। শিক্ষকগণ বিভিন্ন স্কুলে তৈরি করেছেন থিম সং। শুদ্ধ উচ্চারণসহ শিক্ষকগণের নানারকম নতুন নতুন ইনোভেশন মৌলভীবাজারের শিক্ষাকে বর্তমানে যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি আনন্দময় ও শিশুবান্ধব করে তুলেছে। মৌলভীবাজার জেলাকে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাল্যবিবাহ মুক্ত জেলা হিসেবে য়োষণা করা হয়।