বড়লেখার স্কুলছাত্র সাফোয়ানকে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২:৪৬ অপরাহ্ণ
বড়লেখা প্রতিনিধি ::
বড়লেখায় স্কুলছাত্র মোহাম্মদ সাফোয়ানকে (১৫) উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত রোববার (১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম থেকে সাফোয়ানকে উদ্ধার করে বড়লেখা থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সাফোয়ান বড়লেখার জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সাফোয়ান আদালতকে জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতা এবং ব্যক্তিগত একটি সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ক্ষোভে সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল।
পরিবার ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ সাফোয়ান উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির সফরপুর গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। সে বড়লেখা পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে। সাফোয়ান পরিবারের সঙ্গে বড়লেখা পৌরশহরের বারইগ্রাম এলাকায় একটি বাসায় থাকে। গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সাফোয়ান বাজারে চাল কেনার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর সে আর বাসায় ফেরেনি। তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। স্বজনরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাননি। এতে তারা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই সাফোয়ানের বড় ভাই মোহাম্মদ সালমান বড়লেখা থানায় একটি জিডি করেন। জিডির পরিপ্রেক্ষিতে বড়লেখা থানার (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হকের নির্দেশে সাফোয়ানকে উদ্ধারের জন্য অভিযানে নামেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিন্টু চৌধুরী। এদিকে তার সন্ধান চেয়ে গত রোববার পিসি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধন হয়।
পুলিশ জানায়, সাফায়োনারে মুঠোফোনের কললিস্ট ও এসএমএসের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে সাফোয়ান ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় অবস্থান করেছে। এরপর সেখানে অভিযান চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফকিরাপুল এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে সে গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে শ্যামলী বাসযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছে। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রামে পৌঁছে সিএমপি কোতয়ালী থানা পুলিশের সহায়তায় গত রোববার (০১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম থেকে তাকে উদ্ধার করেন। পরদিন সোমবার (২ ডিসেম্বর) তাকে বড়লেখায় নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার ১৫ হাজার টাকা ঋণ আছে। সেই ঋণ পরিশোধ করতে সে মায়ের কাছে টাকা চায়। এতে মা তাকে বকাঝকা করেন। তখন সে তার নিজের কাছে থাকা তিনটি মুঠোফোন ১৭ হাজার টাকা বিক্রি করে। এতেও সে তার ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। এছাড়া ব্যক্তিগত একটি সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ক্ষোভ আর অভিমানে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে বলেন, সাফোয়ানকে চট্টগ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে সে একেক সময় একেক রকম কথা বলেছে। পরে প্রকৃত ঘটনা আমাদের কাছে খুলে বলেছে। মূলত ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং ব্যক্তিগত একটি সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ক্ষোভ আর অভিমানে সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।