ঝাঁঝালো পেঁয়াজ ও মুনাফার জয়রথ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ৫:১৮ অপরাহ্ণ
সরওয়ার আহমদ ::
মুনাফার দিকটি বিবেচনায় আনলে এই দেশটি যেমন একটি উর্বরক্ষেত্র তেমনি প্রচারণা এবং অপপ্রচারপার বেলায়ও সেটিকে চারণ ভূমি বলা যেতে পারে। এই দুটি যখন একাকার বা একই সমতলে মিলিত হয়, তখনতো ঢঁক্কানিনাদ তুঙ্গে উঠে এমনিতেই। এ নিরিখে পেঁয়াজের মাজেজা এখন গগনচুম্বী ভূমিকায়। কেবল পেঁয়াজের উপর ভর করে কারবারীদের মুনাফার অঙ্ক নাকি আড়াই-তিন হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে-এই অঙ্ক আরও প্রসারিত হবে। কৃতিধন্য মুনাফাবাজীর! প্রচারণা অপপ্রচারণা ক্ষেত্রেও পেঁয়াজ যুৎসইভাবে বাজিমাৎ করছে। ‘এ কোন দেশে আছি, যেখানে চাউলের কেজি ২৫ টাকা এবং পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা’ এমন প্রচারণা কান পাতলে শুনা যায় আনাচে-কানাচে। বাস্তবতার নিরিখে এ প্রচারনায় পালে বাতাস লাগাটা অযৌক্তিক নয়। প্রচারকদের হাবভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ফ্যাক্টরীতে। সরকার এ ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেয়ায়- তার মূল্য ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজের উৎপাদন স্বনির্ভরতা যে নেই বরং তা আমদানী নির্ভর, সে সত্যটি ধামাচাপা পড়ে গেছে অপপ্রচারণার ডামাডোলে। সতেরো কোটি মানুষের দেশে অন্তত: পরিবার রয়েছে ৭/৮ কোটি। সবকটি পরিবারেই পেঁয়াজের ঝাঁঝ- একপ্রকার ক্ষোভের আবহ তৈরি করছে। এ ক্ষোভকে আরোও ঘণীভূত করছে ব্যবসায়ীদের লুটেরা তৎপরতা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অক্ষমতা।
ব্যবসার নামে লুঠেরাপণা এদেশে নতুন কিছু নয়। রমজানকে সিয়াম সাধনার মাস হিসেবে
গণ্য করা হলেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নামক লুঠেরা গোষ্ঠী রমজানকে মুনাফার
মাস হিসেবে গণ্য করে পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেয়।
এটিকে প্রতিহত করার জন্য টিসিবিকে কার্যকর করা হয় প্রতি জেলা উপজেলাতে।
তাতে কিছুটা হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমান দীর্ঘ মেয়াদী পেঁয়াজ
সংকটের ক্ষেত্রে টিসিবিকে বসিয়ে রেখে কি লুঠেরাপণাকে পরোক্ষভাবে সহযোগীতা করা হচ্ছে?
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী বন্ধের খবর যখন চাউর হয়, তখন গ্রামীণ হাট বাজারের ছোট দোকানেও ২০/৩০ কেজি করে পেঁয়াজের মজুত ছিলো। শহরের বড় বড় প্রতি দোকানে ৮/১০ বস্তা পেঁয়াজ ছিলো এমনিতেই। এ সমস্থ পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য ২০/২৫ টাকায় থাকলেও এক লাফে বিক্রয়মূল্য উঠে যায় ৮০/৯০ টাকাতে। মুনাফার কি নির্লজ্জ মহড়া! অতঃপর ধাপে ধাপে মূল্য বৃদ্ধির খেলায় পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকাতে উন্নীত। মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত তো আছেই। বিভিন্ন স্থানে মূল্য নিয়ন্ত্রণের মেকী তৎপরতায় পেঁয়াজের মূল্য কিছুটা কমলেও ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে আবার মূল্য বৃদ্ধি তথা লুটেরা বৃত্তির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
এমতাবস্থায় ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের নিকট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অসাড়তা চক্ষুষ্মান। ভোক্তাদের মতে- সরকারের চাইতে পেঁয়াজ সিন্ডেকেট অধিকতর শক্তিশালী। বিভিন্ন গ্রæপ ও আমদানি কারকদেরকে পেঁয়াজ আমদানীর ছাড়পত্র দিলেও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তবে কি এই সুবিধাদানের নামে অবাধ মুনাফাবাদীর পথ প্রশস্ত করা হয়েছে? অবস্থাদৃষ্টে এটিই ভাবছে জনগণ। ব্যবসার নামে লুঠেরাপণা এদেশে নতুন কিছু নয়। রমজানকে সিয়াম সাধনার মাস হিসেবে গণ্য করা হলেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নামক লুঠেরা গোষ্ঠী রমজানকে মুনাফার মাস হিসেবে গণ্য করে পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেয়। এটিকে প্রতিহত করার জন্য টিসিবিকে কার্যকর করা হয় প্রতি জেলা উপজেলাতে। তাতে কিছুটা হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমান দীর্ঘ মেয়াদী পেঁয়াজ সংকটের ক্ষেত্রে টিসিবিকে বসিয়ে রেখে কি লুঠেরাপণাকে পরোক্ষভাবে সহযোগীতা করা হচ্ছে?
সরওয়ার আহমদ : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট