মৌলভীবাজারে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ৬:৪৩ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার ::
মৌলভীবাজার সদরের আকবরপুরে অবস্থিত আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র পুকুর জলাশয়ের জন্য ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এই গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা মৌলভীবাজার জেলার নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের এই পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। এই কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান এ পদ্ধতি হাওরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে তারা কাজ করছেন ।
মৌলভীবাজারের আকবরপুরে অবস্থিত আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায় এই প্রকল্পের নাম ‘ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্প’। হাওরাঞ্চল, নিম্নাঞ্চল ও পুকুর জলাশয়ে চাষাবাদের লক্ষে এই আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রথমে একটি লেকে পরীক্ষামুলকভাবে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করেন গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। এটা সফলতার মুখ দেখায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং এবং শ্রীমঙ্গলের বাইক্কাবিল এলাকার কৃষকদের মাধ্যেমে আরো দুটি ভাসমান বেডে সবজি চাষ করা হয়। এবং সে দুটি জায়গায় চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন। কোন কৃষক নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করছেন তাদের উৎপাদিত সবজি। আর এই চাষ পদ্ধতি দেখে অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন।
মৌলভীবাজারের বাইক্কাবিলে উপকারভোগী কৃষক ফরিদ মিয়া জানান, তিনি চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন। নিজের চাহিদা পুরণ করে বাজারেও বিক্রি করছেন তিনি ভাসমান বেডে উৎপাদি সবজি। তিনি জানান প্রথম চাষ করায় কিছুটা দ্বিধা থাকলেও এখন তার দেখাদেখি অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে।
জানা যায়, এ প্রকল্প জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষে এবং কাওয়াদীঘী হাওর এলাকায় শুরু করার জন্য নতুন করে অনেক চাষীকেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিরা জানান, প্রশিক্ষণ নেয়ার পর অনেক সহজ মনে হয়েছে জলমগ্ন অনেক জায়গায় এই পদ্ধতিতে চাষ করলে আয়ের একটি পথ হবে। বাড়ির পাশে ডোবা জায়গায় এ ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে পরিবারের চাহিদাও মিঠানো যাবে।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিরানা আক্তার সুমি সাংবাদিকদের জানান-বর্তমানে ভাষমান বেডে হচ্ছে বারি-পুইশাক, বারি-লালশাক, শশা, ঝিঙা, ঢেড়শ, লাউ, কুমড়া এবং সব ধরনের সবজি এবং মসলা চাষ করা যাবে। এই চাষাবাদ হাওরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের জন্য উপযোগী। হাওরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি থাকার কারণে কোন ধরনের পোকামাকড় ধরবে না। যার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি এই প্রকল্পের মাধ্যেমে লাভবান হবে।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো সরফ উদ্দিন জানান- ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ করতে শেড তৈরি করতে হয় ৩টি লেয়ারে ,৩০ ইঞ্চি কচুরিপানার লেয়ার , ৩ ইঞ্চি দুলালী লতা, ৫ ইঞ্চি টোপা পানা। শেড তৈরি করে ৪/৫ দিন জার্মিনেশন করে শেষে চারা রোপন করতে তা দুলালী লতা দিয়ে বেঁধে দিতে হয় জানালেন এই কর্মকর্তা।
বর্ষায় এ জেলার হাওরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল ৬-৮ মাস জলমগ্ন থাকে। এই সময়ে নিচু এলাকাগুলোয় ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ বৃদ্ধি পেলে আর্থিক সংকট দূর হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারবেন নিম্নাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ।