পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে কূট-কৌশল
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০১৫, ৬:৫৭ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
মৌলভীবাজারে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে চলছে এখন অনেকটা শনির দশা। উপ-নির্বাচনের মতো পৌর নির্বাচনেও এক গাট্টি নেতা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন পন্থায় প্রচার করে যাচ্ছেন। উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন বিমূখ অনেকেরই এখন দুর্দিন চলছে স্থানীয় নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে। তার আভাস স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই।
অনেকটা অভিভাবকহীনের মতোই নিজেরা নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন। জেলা আওয়ামীলীগের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে কয়েক বছর হলো। এছাড়া উপ-নির্বাচনে অনেক নেতাই মনোনয়ন বিমূখ হয়েছেন তাই মধ্যসারির নেতারা কারো উপরই বিশ্বাস রাখতে পারছেন না বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাউদ্দিন সিরাজ ও মেয়াদোর্ত্তীর্ণ জেলা কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ও পৌর নির্বাচনে প্রার্থী সিলেকশন করতে একান্ত বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দলকে গতিশীল করতে ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে স্বল্প সময়ের মধ্যে জেলা কমিটির নির্বাচন করার বিষয়ে এই দুই নেতা একমত পোষণ করেছেন।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত অনেকেরই কপাল পুড়েছে। দলের প্রবীন নেতাদের বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখছেন মধ্যনবীন ও নবীন নেতাকর্মীরা। তাঁদের চোখে এখন এরা রাজনীতির মাঠে মার খাওয়া পরাজিত সৈনিকের মতোই। এরই ধারাবাহিকতায় এখন পৌর নির্বাচনেও গাট্টি গাট্টি নেতাদের অনেকেই ওই দলে শামিল হবেন বলেও মতামত দিয়েছেন অনেকেই।
পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই সভায় জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, পৌর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের পরামর্শ ও মতামত নিয়ে একজন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন ঠিক করে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সভানেত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই নাম থেকেই পৌর মেয়র মনোনয়ন বোর্ড দলীয় প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করবে। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আর কারো নাম উত্থাপন করা যাবে কিনা সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে কেন্দ্রীয় নেতা ও সভাপতি শেখ হাসিনার নজর কাড়তে ও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে ঘায়েল করতে মৌলভীবাজারে প্রার্থীদের কূট-কৌশল ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মনোনয়ন পেতে একজন প্রার্থী কৌশল হিসেবে সদ্য বিজয়ী সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীনের গ্রুপের অনেককেই ম্যানেজ করেছেন। এই নেতারা সৈয়দ নওশের আলী খোকনকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে সমর্থন দিয়ে তার নাম পাঠিয়েছেন। তার কারণ একই বাড়ি থেকে সংসদ সদস্য ও মেয়র মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি সমালোচনার মুখে পড়বে। আর এই ফাঁকে খোকন ছাড়া অপর যে প্রার্থীর নাম থাকবে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাবেন এমনই চিন্তাভাবনা থেকে এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। আর এক্ষেত্রে খোকনের বিরোধীরাই সফল হবেন বলে তারা আশা করছে।
আরও জানা গেছে, যদি দেবর খোকনের নাম প্রস্তাব করেন বা সমর্থন করেন তাহলে সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীনের নিজের ক্ষতি হতে পারে। সম্ভাব্য মন্ত্রীর যে পদটি তিনি পেতে যাচ্ছেন বলে মৌলভীবাজারে গুঞ্জন উঠেছে তা থেকেও তিনি বঞ্চিত হতে পারেন বলে বিরোধী শিবিরের অনেকেই মনে করছেন। তবে এক্ষেত্রে এই আশঙ্কাটি আবার উড়িয়ে দিয়েছেন এমপি শিবিরের অনেক নেতাকর্মীই। তারা এই বিষয়টিকে পাত্তাই দিচ্ছেন না।
অন্যদিকে দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি অংশ নেবে কিনা এই সংশয় নেই এখন। মৌলভীবাজারে বিভেদ কোন্দল যা-ই থাকুক না কেন বিরোধী দল হিসেবে দলীয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নেতাকর্মী ও সমর্থক ভোটাররাও একমত পোষণ করেছেন। নেতাকর্মীদের মাঝেও এখন অনেকটা চাঙ্গাভাব।
পৌর নির্বাচনে মৌলভীবাজার পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন, বর্তমান মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন ও কাউন্সিলর অলিউর রহমান অলি।
অন্যদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে অনেকেরই নাম। এরা হলেন, মরহুম সমাজকল্যাণমন্ত্রীর ছোট ভাই সৈয়দ নওশের আলী খোকন, জেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল, জেলা যুবলীগ সভাপতি ফজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক নাহিদ আহমদ।
জেলা বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আওয়ামীলীগের মেয়র পদে বঞ্চিতরা বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গোপনে কাজ করবেন। আর এবিষয়ে অনেকেই দলের অনেক বিশ্বস্থ নেতাদের সাথে লিঁয়াজো রেখে চলেছেন।