একদিন তিনি ও মন্ত্রী হবেন
প্রকাশিত হয়েছে : ৮ নভেম্বর ২০১৫, ৭:৩০ অপরাহ্ণ
তমাল ফেরদৌস ::
কথায় আছে সৃষ্টিকর্তা মানুষের মনের ভাষা বুঝেন। আর সে অনুযায়ী তিনি মানুষকে দিয়েই মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান। আর তাই মানুষ সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে। এমনই একটি ঘটনার জন্ম হলো সৈয়দা সায়রা মহসীনের মনোনয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে। তার মনোনয়ন পাওয়ার মধ্য দিয়ে এই আসনের সাধারণ মানুষ ও ভোটারের মনের আকাঙ্খা পূরণ হলো।
জয়তু শেখ হাসিনা, ধন্য শেখ হাসিনা, অভিনন্দন শেখ হাসিনা। সৈয়দ মহসীন আলীকে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর পদ দিয়ে তিনি এঅঞ্চলের মানুষকে ঋণী করেছিলেন। এরপর মন্ত্রীর মৃত্যুর পর এবার তার সহধর্মিনীকে তার আসনে দলের মনোনয়ন দিয়ে আজন্ম ঋণী করলেন।
সৈয়দা সায়রা মহসীন রাজনীতি করতেন তবে স্বামীর মতো নয়। তিনি স্বামীকে আজীবন অনুপ্রেরণা দিয়ে আসেন। ‘এবিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। কবির এই আপ্ত বাক্যটি এই মহিয়সী নারীর ক্ষেত্রে শতভাগ প্রযোজ্য। রাজনীতি পাগল মন্ত্রী সারা জীবন মানুষের কাজ করতে গিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও সংসারের প্রতি দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারেন নি। কিন্তু তার সহধর্মিনী সায়রা মহসীন মন্ত্রীর অবর্তমানে তার দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করে গেছেন।
সদা হাসোজ্জল এই নারীকে কোনদিন দেখিনি মুখ কালো করে কথা বলতে। তিনি তার স্বামীর চেয়ে বেশিমাত্রায় ছিলেন মানুষের কাছের জন। তাইতো ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিলো তার বাড়িতে। তিনি সব মেনে নিয়ে সবাইকেই আপ্যায়ন করতেন। তিনি কোনদিন ভেঙে পড়েন নি। মন্ত্রীকে সদা সর্বদা পাশে থেকে উৎসাহ যুগিয়ে গেছেন।
কে এই মহিয়সী নারী ? পরিচয় খুঁজতে গিয়ে জানা গেলো অনেক অজানা তথ্য। সৈয়দা সায়রা মহসীন ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম সৈয়দ বদরউদ্দিন ও মাতা মরহুমা সৈয়দা রাবেয়া খাতুন। তার বাবার বাড়ি সিলেট শহরের কাজী ইলিয়াছ, জিন্দাবাজারে। সৈয়দা সায়রা মহসীনের দাদা মরহুম সৈয়দ মাহমুদ আহমেদের বাবা মরহুম খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া ছিলেন আসামের শিক্ষামন্ত্রী। সেসময়ে শিক্ষানুরাগী কাপ্তান মিয়া সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজের (এমসি) জন্য জমি দান করেছিলেন।
সৈয়দা সায়রা মহসীনের আপন চাচা হলেন ঢাকার অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর্য শিল্পী সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালেদ এবং তার মামা সৈয়দ মুর্শেদ কামাল ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর এলাকার সংসদ সদস্য।
১৯৮১ সালে এই মহিয়সী নারী বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন তৎকালীন পৌরসভা চেয়ারম্যান সৈয়দ মহসীন আলীর সঙ্গে। এরপর থেকেই তাঁর অন্যজীবন শুরু হয়। স্বামীকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উৎসাহে রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তিনি মৌলভীবাজার মহিলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, আজীবন সদস্য ও সহ-সভাপতি মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার, আজীবন সদস্য রেডক্রিসেন্ট মৌলভীবাজার, আজীবন সদস্য রোগী কল্যাণ সমিতি মৌলভীবাজার। ১৯৯৬ সালে মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ আসনের সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী ছিলেন। তাঁর তিন কন্যা সন্তান সৈয়দা সায়লা শারমিন, সৈয়দা সানজিদা শারমিন, সৈয়দা সাবরিনা শারমিন।
এদিকে তার মনোনয়ন পাওয়ার খবর মৌলভীবাজারে পৌঁছার পর সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। রাতেই আনন্দ মিছিল হয়েছে জেলা সদরে। সৈয়দ মহসীন আলী গণমানুষের নেতা ছিলেন। তাই তার মৃত্যুর পর মানুষ আশা করেছিলো এই পরিবার থেকে দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। অন্ততপক্ষে মহসীন আলীর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিবেচনায় রেখে মানুষ দলের কাছে এই আশা রাখে। হলো ও তাই।
কারণ মহসীন আলীর মৃত্যুর পর অনেককেই গ্রুপ বদলাতে দেখে দুঃখ পেয়েছে মানুষ। সায়রা মহসীন বা তার পরিবারের সাথে দুরত্ব বজায় রেখেছেন অনেকেই। বিশেষ করে মন্ত্রীর মৃত্যুর তার বাড়ি প্রায় ফাঁকা হয়েই গিয়েছিলো। মন্ত্রীর চেহলামে অনেক মন্ত্রীর আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেন নি। কারণ ক্ষমতা নাই তাই সবাই ভুলে গেছেন মহসীন আলীকে। আর এটাই যেনো নিয়তি। তার পরিবারের সদস্যরা তবুও মুর্ছা যান নি। আশায় বুক বেঁধে সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এই অঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে মৌলভীবাজার সদরের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভারাক্রান্ত হয়েছে যখন মহসীন আলীর অনেক কাছের মানুষ নিজে মনোনয়ন চেয়েছে। মানুষের আশা ছিলো কাছের মানুষগুলো মন্ত্রীর অবর্তমানে তার পরিবারের সাথে থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়াবে। কিন্তু হয়েছে বিপরীত। মানুষ তখন আশায় বুক বাঁধে এবং শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে থাকে।
এরপর সাধারণ মানুষকে আরও বেশি হতাশা ও ক্ষোভে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। যখন ডজন ডজন নেতাকর্মী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে এই খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তবুও যারা মহসীন আলীকে প্রাণের নেতা মানতো তারা সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে।
রোববার দিনভর সারা জেলার মানুষের মুখে মুখে ছিলো মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি। ‘টক অব দ্য ডিস্ট্রিক্ট’ বলা যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মানুষের উৎসুক দৃষ্টি ঢাকামুখী হয়ে পড়ে। যে যার মতো পারেন ঢাকায় পরিচিতজনদের কাছে ফোন করে সর্বশেষ খবর জানতে চেষ্টা করেছেন। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সবাই গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে মনোনয়ন কে পাচ্ছেন তা জানতে চেয়েছেন। অবশেষে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাঙ্খিত খবর মৌলভীবাজারের জনগণ পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়ে।
সৈয়দা সায়রা মহসীনের মনোনয়ন পাওয়ার মধ্যদিয়ে মরহুম মন্ত্রীর পরিবারে আবার নতুন করে রাজনীতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ এই দাবি রাখে যে, মন্ত্রীর পথ অনুসরণ করে তিনি রাজনীতি করে যাবেন। এক্ষেত্রে সকলকে সাথে নিয়ে তিনি এই আসনের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাবেন। যেভাবে তার স্বামী সকল দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করে গেছেন। আর মন্ত্রীর অসমাপ্ত কাজগুলো তিনি সমাপ্ত করবেন। সফলভাবে এই গুরুদায়িত্ব পালন করে একদিন তিনিও দেশের মন্ত্রী হবেন এই আশাবাদ রেখে তার রাজনৈতিক জীবনের শুভ কামনা করছে এআসনের সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা। ০৮.১১.১৫