মঙ্গলবার জেলহত্যা দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ২ নভেম্বর ২০১৫, ১২:৩৭ অপরাহ্ণ
পূর্বদিক রিপোর্ট ::
মঙ্গলবার জেলহত্যা দিবস। বাঙালী জাতিকে নেতৃত্বশুণ্য করতে ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর, জাতীয় চার নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন।
এরা হলেন, বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রীসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামান।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার সবচেয়ে ঘৃণিত ও বিশ্বাসঘাতক সদস্য তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমদের মদদে উচ্চাভিলাসী নি¤œপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা রাতের আঁধারে এই্ নির্মম হত্যাকা-টি ঘটায়। চার নেতাকে হত্যা করতে প্রথমে গুলি ও পরে বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) আব্দুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে তার নেতৃত্বে ৪/৫জন সেনা সদস্য কারাগারে ঢুকে গুলি করে চার নেতাকে হত্যা করে বলে অভিযোগ করা হয়। দীর্ঘদিন পর ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে পলাতক রিসালদার (ক্যাপ্টেন) মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদ-াদেশ এবং ১২জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ প্রদান করা হয়।
মামলায় সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর উচ্চ আদালত হয়ে চলতি বছর আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে এই ঘৃণ্য হত্যাকা-ের বিচারকাজ শেষ হয়।
বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্থানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তাঁকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। এরপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।
বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোস্তাক আহমদ মাত্র ৮২দিন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। এরমধ্যে কুলাঙ্গার মোস্তাক জাতীয় চার নেতাকে হত্যাকারী খুনীদের বিচার না করতে দায়মুক্তির অধ্যাদেশ জারি করে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। আর মোস্তাককে পরিকল্পনায় সার্বিক সহযোগিতা করেছিলো আরও দুই কুলাঙ্গার ও বিশ্বাসঘাতক কর্ণেল ফারুক ও কর্ণেল রশিদ।
এই হত্যাকা-ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সমস্ত কারণ বাঁধাগ্রস্থ করেছে সেগুলোর তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে লন্ডনে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় উদ্যোগটি থেকে যায়। সেসময়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর লেখা ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস’ গ্রন্থে এই কমিশন বিষয়ে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর পুত্র মোহাম্মদ সেলিম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ সি এমপির নেতৃত্বে এই কমিশন গঠিত হয়।
এদিকে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। মঙ্গলবার দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদাভাবে বাণী দিয়েছেন। সারাদেশে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। ঢাকায় সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী রয়েছে। এছাড়া গণফোরাম, জাসদসহ বিভিন্ন সংগঠনও দিবসটি পালনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।