মহাসড়কে সব ধরনের অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০১৫, ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোতে সব ধরনের অটোরিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে বড় যানবাহনের চাপায় অটোরিকশা আরোহীদের হতাহতের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সচিবালয়ে এ বিষয়ে এক সভা শেষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “জাতীয় মহাসড়কে সিএনজি চলতে পারবে না, আজ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মন্ত্রী বলেন, সরকার উদ্যোগী হওয়ায় মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমন চলাচল কমে গেছে।
“নতুন উপসর্গ মহাসড়কে সিএনজি (অটোরিকশা), অতীতে এতো সিএনজি অটোরিকশা ছিল না, এ সকল অটোরিকশা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।”
একের পর এক দুর্ঘটনার কারেণ গত বছর হাই কোর্ট দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ১০ জেলার মহাসড়কে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার বাহন নছিমন, করিমন, ভটভটি না চালানোর নির্দেশ দেয়। পরে সরকারও মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর হয়।
কিন্তু গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশা দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে গেলে বিষয়টি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ঈদের ছুটির মধ্যে গত সোমবার রাতে সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সংযোগ মহাসড়কে বাসচাপায় অটোরিকশার পাঁচ আরোহীর মৃত্যু হয়।
এর আগে গত ১৭ জুলাই মুন্সীগঞ্জে বাস-অটো সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন। আগের দিন কিশোরগঞ্জে ট্রাক্টর চাপায় প্রাণ যায় ৩ অটোরিকশা আরোহীর।
একই দিনে আখাউড়ায় মাইক্রোর ধাক্কায় অটো খালে পড়ে মানা যান তিনজন। ১৫ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঢাকা সিলেট মহাসড়কে পিকআপ ভ্যান ও অটোরিকশার সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন।
ঈদযাত্রায় সড়কের পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সচিবালয়ে ‘মনিটরিং টিমের’ সভায় এসব বিষয়েও আলোচনা হয়।
সভা শেষে কাদের বলেন, এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা এবং তাদের কর্মস্থলে ফেরার পথ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ‘নির্বিঘ্ন’ ছিল।
“এবার প্রায় ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছে। গত বছর ছিল ৯০ জন। কিন্তু এতে স্বস্তির কোনো কারণ নেই, প্রতিটি মৃত্যুই অপূরণীয় ক্ষতি, এসব ঘটনা বেদনাদায়ক।”
এবারের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী ঈদে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে কাদের বলেন, “আসন্ন ঈদ-উল-আজহার প্রস্তুতিও আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। ঢাকা মহানগরীর এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্টগুলো নির্বিঘ্ন করতে এখন থেকে কাজ শুরু হয়েছে।”
জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর ও আশেপাশে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ঈদের আগে-পরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “দুর্ঘটনাস্থলের সড়কে কোনো সমস্যা ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা আমাকে জানিয়েছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালনাই দুর্ঘটনার কারণ।”
তারপরও ‘তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে’ বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে চারটি ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পটে’ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আদলে আগামী দুই মাসের মধ্যে ‘নিউ জার্সি ব্যারিয়ার বা ডিভাইডার’ বসানো হবে বলে জানান কাদের।
সড়ক প্রকৌশলীদের দক্ষতা মূল্যায়নের পাশাপাশি যথাসময়ে মেরামত শেষ করতে ব্যর্থ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “যথাসময়ে কাজ শেষ করতে অহেতুক বিলম্বের জন্য পিপিআর অনুযায়ী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল এবং পিবিএল এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
অন্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক, সওজের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল, বিআরটিএর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান, ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেনসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।