নাম পাল্টে একই প্রকল্প এডিপি ও এলজিএসপিতে
কমলগঞ্জে এলজিএসপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুলাই ২০১৫, ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে লোকাল গর্ভমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি) প্রকল্পের ১ম ও ২য় পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম দেখা গেছে। প্রকল্প কাজের নাম পর পর অর্থবছরে এবং একই নাম পরিবর্তন করে এডিপি ও এলজিএসপিতে বরাদ্দ করা হয়েছে। রাস্তা ইটসলিং, কালভার্ট, ল্যাট্রিন নির্মাণের নামে প্রকল্প তৈরি করে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের যোগসাজসে চলছে এসব কার্যক্রম।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এসব বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের জন্য ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এলজিএসপি-২ প্রকল্পে ৭৭ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩৯ টাকা বরাদ্দ দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। রহিমপুরে ইউনিয়নে ১০ লাখ ৪২ হাজার ৪৩৫, পতনউষারে ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৮, মুন্সিবাজারে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৬, শমশেরনগরে ৯ লাখ ৬৬৬০৮, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৭ লাখ ৪২ হাজার ৩২০, আলীনগর ইউনিয়নে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৬২৬, আদমপুর ইউনিয়নে ১০ লাখ ১৬০, মাধবপুর ইউনিয়নে ৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৪২ এবং ইসলামপুর ইউনিয়নে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ১০৪ টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে। বরাদ্ধকৃত এসব অর্থের মধ্যে রাস্তা ইটসলিং, রিংস্ল্যাব সরবরাহ, ড্রেন, গাইড ওয়াল, কালভার্ট, ল্যাট্রিন নির্মাণ, সিসি পাকাকরন ও ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য কেন্দ্রের সরঞ্জামাদি ক্রয় সহ বিভিন্ন প্রকল্প দেখানো হয়েছে।
জানা যায়, বাস্তবে এসব প্রকল্পের একটা অংশ একই অর্থ বছরের এডিবি প্রকল্পেও নাম পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এলজিএসপি প্রকল্পে কোন কোন প্রকল্পে আংশিক কাজ ও কোন কোন প্রকল্পে কাজ ছাড়াই টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। এলজিএসপি’র ১ম কিস্তির একাধিক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। শমশেরনগর ইউনিয়নের পপুলার ফার্মেসী হতে দক্ষিণমুখী ভিতর বাজার রাস্তা সিসি পাকাকরণে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। গত অর্থ বছরেও হাজীনগর মসজিদ রাস্তা ইটসলিং এর প্রকল্প দেখানো হলে কোন কাজ হয়নি। চলতি ২য় পর্যায়েও ঐ রাস্তায় ১লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলে বাস্তবে কোন কাজ হয়নি। এভাবে উপজেলার পতনউষার, মুন্সীবাজার, আলীনগর, আদমপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে চাইলেও ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি সদস্য বলেন, এলজিএসপি কাজেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। এসব কাজে কেউ তদারকি করেন না। ইউএনও অফিস, ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট মেম্বারদের যোগসাজসে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়।
অভিযোগ বিষয়ে শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, বর্তমানে কাজ না করে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয় না। আর এখন কন্টাক্টারের মাধ্যমে কাজ করা হয়। প্রকল্প সমূহের কাজ চলমান রয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে এলজিএসপি মৌলভীবাজার জেলার ফ্যাসিলিটেটর জয় গোপাল বর্মন বলেন, কাজ চলমান রয়েছে। এলজিএসপি’র কাজ জুলাই মাসের পরেও করা যায়। তাছাড়া যেসব প্রকল্পে কাজ হয়নি সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ দিতে বলেন তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।