বিএসটিআই’র ছাড়পত্রে ‘গোঁজামিল’
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০১৫, ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ) পরিচালিত ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি (এনএফএসএল) ২০১৩ সালে বাজারে বিক্রীত মধুর ২২টি নমুনা পরীক্ষা করে ২১টিতে ভেজাল শনাক্ত করে। একই বছর বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) মধুর ২০টি নমুনা সংগ্রহ করে সবগুলোকে কৃতকার্য সনদ দেয়।
একইভাবে এনএফএসএল গত বছরের ৭ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন, সরিষা ও নারকেল তেলের ৭৭টি নমুনায় ফ্রি ফ্যাটি এসিডের মাত্রা পরীক্ষা করে। এতে ৩০টি নমুনায় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। এনএফএসএল ভোজ্যতেলে শুধু একটি প্যারামিটার (ফ্রি ফ্যাটি এসিডের মাত্রা) পরীক্ষা করেছিল। অন্যদিকে বিএসটিআই গত ১৪ এপ্রিল, ২৮ মে ও ১ জুন বাজারে বিক্রীত ভোজ্যতেলের তিনটি ব্র্যান্ডের ১২টি নমুনা পরীক্ষা করে। এতে সব ক’টি প্যারামিটার পরীক্ষা করে ব্র্যান্ডগুলোকে কৃতকার্য সনদ দেয়া হয়। এতে বিএসটিআই ত্রুটিপূর্ণ ছাড়পত্র দিচ্ছে কিনা, এ প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ভোজ্যতেল পরিশোধনের মাধ্যমে নিরাপদ ও খাওয়ার উপযোগী করতে হয়। কিন্তু বেশকিছু কোম্পানি খরচ বাঁচাতে সঠিকভাবে তেল পরিশোধন করছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইপিএইচ পরিচালিত এনএফএসএল পরীক্ষায় বিষয়টি ধরা পড়েছে। কিন্তু পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় তেলে কোনো সমস্যা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
আইপিএইচ সূত্রে জানা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের ১৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ছয়টিতে মাত্রাতিরিক্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেছে। সয়াবিন তেলে ফ্রি ফ্যাটি এসিডের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা হচ্ছে ২ শতাংশ। কিন্তু পরীক্ষিত ১৩টি নমুনার মধ্যে ছয়টিতেই ২ দশমিক ২ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। খোলা সয়াবিন তেলের অবস্থা আরো খারাপ। দুটি নমুনা পরীক্ষা করে আইপিএইচ দুটিতেই ২ দশমিক ৬ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিডের উপস্থিতি পেয়েছে।
বাজারে বিক্রীত সরিষার তেলেও মাত্রাতিরিক্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড পেয়েছে আইপিএইচ। সরিষার তেলে ফ্রি ফ্যাটি এসিডের সর্বোচ্চ স্বাভাবিক মাত্রা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। কিন্তু আইপিএইচের পরীক্ষায় বোতলজাত সরিষার তেলের ১৯টি নমুনার মধ্যে ১০টিতেই ১ দশমিক ৩ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেছে। খোলা সরিষার তেলের পাঁচটি নমুনার মধ্যে চারটিতেই ১ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড শনাক্ত হয়েছে। বাদাম তেল ও তিলের তেলের অধিকাংশ নমুনায়ও মাত্রাতিরিক্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেছে। শুধু নারকেল তেলের বেশির ভাগ নমুনায় নিরাপদ মাত্রায় ফ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেছে। আইপিএইচের পরীক্ষায় নারকেল তেলের ১৭টি নমুনার মধ্যে চারটিতে মাত্রাতিরিক্ত ফ্রি ফ্যাটি এসিড শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া অলিভ অয়েল ও রাইস ব্র্যান অয়েলে স্বাভাবিক মাত্রায় ফ্রি ফ্যাটি এসিডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এনএফএসএলের এক কর্মকর্তা জানান, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে সংগৃহীত নমুনা তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। এসব তেলের মধ্যে শুধু ফ্রি ফ্যাটি এসিডের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। তবে অন্যান্য প্যারামিটার পরীক্ষা করা হয়নি বলে জানান তিনি।
বাজার থেকে সংগৃহীত তেলের নমুনার সর্বশেষ পরীক্ষা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) কমল প্রসাদ দাস বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরীক্ষার প্রতিবেদন দেখে বোঝা যাবে, তারা কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করেছে। তাদের প্রতিবেদন দেখে পরে মন্তব্য করা যাবে। তবে ইনস্টিটিউটের কেমিক্যাল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমদানিকৃত সয়াবিন তেলে চালানভেদে ফ্রি ফ্যাটি এসিড কমবেশি হতে পারে। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা পদ্ধতি এবং নমুনা সংরক্ষণের ওপর ফলাফল নির্ভর করে। এছাড়া আইপিএইচের পরীক্ষিত নমুনাটি দীর্ঘদিনের পুরনো হলেও তাতে ফ্রি ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেশি হতে পারে।
তবে বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (প্রশাসন) তাহের জামিল বলেন, কোনো পণ্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার উপক্রম হলে সেটি পরীক্ষা করে ফলাফল ভালো পাওয়া যাবে না। এছাড়া এনএফএসএল যে তেলকে ত্রুটিপূর্ণ বলে শনাক্ত করছে, তার ফলাফল যাচাইয়ের ব্যাপার রয়েছে। এসব বিষয়ে ডকুমেন্ট ছাড়া মন্তব্য করা কঠিন।
এর আগে ২০১১ সালের আগস্টে মেসার্স সাথী ফ্রেশ ফুডস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত খেজুর একই দিন বিএসটিআই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগ এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পরীক্ষা করা হয়। শেষোক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান খেজুরে ফরমাল ডিহাইডের (ফরমালিন) উপস্থিতি নেই বলে সনদ দেয়।