চা শিল্প সুরক্ষায় ১০ দফা কর্মপরিকল্পনা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ জুন ২০১৫, ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
দেশিয় চা শিল্পের সুরক্ষা দিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১০ দফা কর্মপরিকল্পনাও ঘোষণা করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত চায়ের বিপণন বাড়াতে ও আমদানি নিরুৎসাহিত করতেই মূলত এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরে ১ কোটি ৪৩ লাখ কেজি চা আমদানি হয়। চলতি অর্থবছরে তা দেড় কোটি কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধিতে আমদানিকৃত চায়ের দাম বাড়বে। ফলে দেশে উৎপাদিত চায়ের দাম তুলনামূলক কম হবে এবং এতে চাহিদা বাড়বে।
এ বিষয়ে চা-কর ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি আফজাল রশীদ চৌধুরী বলেন, বিদেশ থেকে মানহীন চা আমদানি করে দেশিয় চা শিল্প ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। গত দু-তিন বছরে দেশের অনেক চা বাগান মালিক একেবারে পথে বসে গেছে। তাই আমরা অনেক দিন ধরেই অর্থমন্ত্রীর কাছে চায়ের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলাম।
তিনি বলেন, শুল্ক বাড়ানোর ফলে মানহীন চা আমদানি কমবে। এতে দেশিয় চায়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশিয় উদ্যোক্তারা উৎপাদনে মনোযোগী হবেন। উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত হবেন। এতে দেশের চা শিল্পই লাভবান হবে।
জানা গেছে, সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চা শিল্পের উন্নয়নে ১০টি কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— চা বাগানের উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধি, অনুন্নত চা বাগানের উন্নয়ন, ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান সম্প্রসারণ, চা বাগানের কারখানা সুষমকরণ ও আধুনিকীকরণ, প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট জোরদারকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, সেচ সুবিধা বৃদ্ধি, শ্রমিক কল্যাণ ও চা বাগানের ব্যবস্থাপনা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। তিন পর্যায়ে ১২ বছর মেয়াদি এসব পরিকল্পনায় ব্যয় হবে ৯৬৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৮৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ এবং বাকি টাকা অনুদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অব্যবহূত চা চাষযোগ্য ভূমি ব্যবহারের বিষয়ে ২০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে চা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।
চা শিল্প দেশিয় কাঁচামালনির্ভর। চা শিল্পে সংশ্লিষ্ট ১৬৬টি বাগানে ১ লাখ ৬ হাজার ২০৪ জন শ্রমিক এবং ৫ হাজার ৭৬১ জন কর্মচারী রয়েছে। এছাড়া এ শিল্পে চা ব্যবসায়ীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখ লোক নিয়োজিত রয়েছে।
চা শিল্প প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার ফলে ১৯৭০-এর তুলনায় ২০১৪ সালে উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। ১৯৭০ সালে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার কেজিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রাতিষ্ঠানিক কোটায় চা বোর্ডের অনুকূলে আমদানিকৃত ও উন্নয়ন সহযোগিতা মূল্যের সার থেকে ১৪ হাজার ৫০ টন ইউরিয়া, ৩ হাজার ৪১৭ টন টিএসপি, ৭ হাজার ৯০৫ টন এমওপি এবং ৯০৭ টন ডিএপি সার চা বাগানে সরবরাহ করা হয়েছে।
বিটিএ সূত্রে জানা গেছে, সম্পূরক শুল্ক কম থাকায় বিদেশ থেকে নিম্নমানের ও কম দামি চা আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। এতে দেশিয় চা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িকভাবে চাপের মুখে পড়ে। সম্পূরক শুল্ক আরোপিত থাকায় ২০১২ সালে চা আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২০ লাখ কেজি। কিন্তু শুল্ক তুলে নেয়ার ফলে ২০১৩ সালে আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ কেজিতে। গত বছর এর পরিমাণ আরো বাড়ে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশিয় চায়ের বাজার কমেছে। ফলে দামেও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে।