বিষাক্ত বর্জ্যে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ
হ্যাচারির অনুমতি নিয়ে সিপি’র অবৈধভাবে ব্রয়লার মোরগ উৎপাদন, নিঃস্ব হবার শঙ্কায় ক্ষুদ্র খামারিরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ জুন ২০১৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
পোল্ট্রি হ্যাচারির অনুমতি নিয়ে অবৈধভাবে ব্রয়লার মোরগ উৎপাদনের ফলে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র খামারী নিঃস্ব হবার আশঙ্কায়। বিষাক্ত বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাবে গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ অনেকেই ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী সরকারি খাসভূমিসহ ও জনসাধারণের চলাচলের ১৮ থেকে ২৫ ফুট প্রস্থ রাস্তা দখল করে নির্মিত হয়েছে এ হ্যাচারি।
জয়নাল আবেদিন, কমলগঞ্জ ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট এলাকায় পোল্ট্রি হ্যাচারির অনুমতি নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্রয়লার মুরগী উৎপাদনের ফলে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র খামারী নিঃস্ব হবার আশঙ্কায়। হ্যাচারির বিষাক্ত বর্জ্যে রোগাক্রান্ত হচ্ছে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ স্থানীয় লোকজন। ঝুঁকির মুখে এলাকার পরিবেশ।
স্থানীয় বাসিন্দা শরীফ আহমদ, সিতাংশু দত্ত, আজির উদ্দিন জানান, চৈত্রঘাট এলাকায় ধলাই নদীর তীরে পোল্ট্রি হ্যাচারির জন্য কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রয়কৃত চার একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির সাথে আরও প্রায় ৫ থেকে ৮ একর নদী তীরবর্তী সরকারি খাসভূমিসহ ও জনসাধারণের চলাচলের ১৮ থেকে ২৫ ফুট প্রস্থ রাস্তা দখল করে সীমানা দেয়ালের ভেতরে পোল্ট্রি হ্যাচারী স্থাপন করা হয়েছে।
মুন্সিবাজার ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৈত্রঘাট মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানের হ্যাচারী নির্মিত স্থানের শুধুমাত্র ১১৪ নম্বর দাগে ২ একর ২৪ শতক ভূমিই রয়েছে ডিসি খতিয়ানের।
সি.পি. বাংলাদেশ লি. নাম ধারণ করে ওই পোল্ট্রি হ্যাচারিতে গত দেড় মাস ধরে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ব্রয়লার মোরগ উৎপাদন শুরু করে। অবৈধভাবে পোল্ট্রি হ্যাচারি স্থাপনের প্রতিবাদে মৌলভীবাজারের ক্ষুদ্র খামারিরা প্রতিবাদ জানালেও তাতে কোন কর্ণপাত করা হচ্ছে না। উপরন্তু হ্যাচারির বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। বিষাক্ত বর্জ্যের ক্ষতিকর প্রভাবে গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ অনেকেই ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
চৈত্রঘাটে অনিবালা দত্ত বলেন, এই হ্যাচারী বর্জ্যরে দুর্গন্ধে তাদের বসবাস করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর ছোট বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা করানোর পরও সমস্যা দেখা দেয়ায় তাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়েছেন। মলয় ভৌমিক বলেন, এই খামার চালুর পর থেকেই তাঁর গর্ভবর্তী স্ত্রীর পাতলা পায়খানা, সর্দি, কাশি ও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এ দিকে বিপুল পাল, অমর চান, শ্যামা পদ দেব, বীরেন্দ্র দেব সহ এলাকার ক্ষুদ্র খামারিরা অভিযোগ করেন, পোল্ট্রি হ্যাচারির অনুমতি নিয়ে তারা অনৈতিকভাবে বাণিজ্যিক ব্রয়লার মুরগী উৎপাদন শুরু করেছে। ফলে তারা ক্ষুদ্র খামারিরা পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
সিপির এ ধরনের আগ্রাসী তৎপরতার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার পোল্ট্রি বিজনেস এসোশিয়েশনের পক্ষ থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ বিষয়ে পোল্ট্রি হ্যাচারি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর গেটের ভিতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে কয়েক মাস পূর্বে স্থানীয় এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের কেয়ার টেকার সাহেদ আহমদ জানান, বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে ভূমি ক্রয় করে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানায় হ্যাচারি নির্মিত হয়েছে। এখানে কোন সরকারি খাস জমি নেই। এখানে কোন পরিবেশ দূষন ঘটছে না বলে তিনি দাবি করেন।
কমলগঞ্জ ইউএনও জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর কাছে দেয়া অভিযোগের একটি অনুলিপি পেয়েছেন। অভিযোগ বিষয়ে খতিয়ে দেখবেন।