চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা বার্সেলোনার
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ জুন ২০১৫, ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ
স্পোর্টস ডেস্ক ::
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ইউভেন্তুসকে হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে স্পেনের অন্যতম সফল দলটি। ফাইনালে বার্সেলোনার ৩-১ গোলের জয়ে একটি করে গোল করেন ইভান রাকিতিচ, লুইস সুয়ারেস ও নেইমার। ইউভেন্তুসের একমাত্র গোলটি আসে আলভারো মোরাতার পা থেকে।
শনিবার বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে চতুর্থ মিনিটে বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেন রাকিতিচ। সম্পূর্ণ দলীয় প্রচেষ্ঠার ফল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের তৃতীয় দ্রুততম গোলটি।
প্রায় মাঝমাঠ থেকে লম্বা ক্রস করেন মেসি। সেখান থেকে এক টোকায় নেইমারকে বল দেন জর্দি আলবা। নেইমার খুঁজে পান ছুটে ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়া আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে। তার পাস থেকে জানলুইজি বুফনকে পরাস্ত করে বল জালে পাঠান ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডার রাকিতিচ।
সপ্তম মিনিটে প্রথম সুযোগটি পায় ইউভেন্তুস। মোরাতার পাস থেকে উপর দিয়ে মেরে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের হতাশ করেন আর্তুরো ভিদাল।
পরের ছয় মিনিটে ইউভেন্তুসের রক্ষণকে ভীষণ চাপে রাখে লুইস এনরিকের শিষ্যরা। মেসির দারুণ সব পাস, নেইমার-সুয়ারেসের জাদুকরী স্পর্শে সুযোগ তৈরি করছিল বার্সেলোনা। কিন্তু জাল পর্যন্ত যেতে পারেনি তারা।
ত্রয়োদশ মিনিটে ইউভেন্তুসকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন দানি আলভেস। স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের এই ডিফেন্ডারের জোরালো শট কোনোমতে রক্ষা করেন বুফ্ফন।
পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণ ছাড়া গতি ছিল না মাস্সিমিলিয়ানো আলেগ্রির শিষ্যদের। অসাধারণ এক মৌসুম কাটানো মেসি-সুয়ারেস-নেইমারদের সামলে আক্রমণে যাচ্ছিল তারা। মাঝমাঠ থেকে দ্রুত গতিতে উঠে সুযোগ তৈরি করছিলেন পাট্রিস এভরা, কার্লোস তেভেসরা। কিন্তু মোরাতা, ভিদালরা সেগুলো লক্ষ্যে পাঠাতে পারেননি।
২৪তম মিনিটে ক্লদিও মার্চিশিওর দূরপাল্লার আচমকা শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশ হতে হয় ইউভেন্তুসকে।
এগিয়ে যাওয়ার পরও আক্রমণের দিকেই ছিল বার্সেলোনার মনোযোগ। তাই রক্ষণ সামলেই আক্রমণে যেতে হচ্ছিল ইউভেন্তুসকে। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের প্রাণবন্ত ফুটবল উপহার দিয়ে সুযোগ পেলেই পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়াচ্ছিলেন পল পগবা, তেভেস, মোরাতা, ভিদালরা।
৪০তম মিনিটে দুইবার হতাশ হতে হয় লুইস সুয়ারেসকে। প্রথমবার অল্পের জন্য লক্ষ্যে রাখতে পারেননি উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার। তার পরের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন ইউভেন্তুসের ৩৭ বছর বয়সী গোলরক্ষক বুফন।
৪৪তম মিনিটে একটি দুরূহ সুযোগ এসেছিল সুয়ারেসের সামনে। নেইমারের ক্রস খুঁজে পায় ডি-বক্সে অরিক্ষিত থাকা এই স্ট্রাইকারকে। বল একটু বেশি ওপরে থাকায় সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবার সুযোগ আসে সুয়ারেসের সামনে। ৪৯তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণ থেকে তার শট কর্নারের বিনিময়ে ব্যর্থ করে দেন বুফন। গোল না পেলেও এই অর্ধের শুরুতে ইউভেন্তুসের রক্ষণসীমায় ভীতি ছড়ান মেসি-সুয়ারেস।
বার্সেলোনার আক্রমণের ধাক্কা সামলে ৫৫তম মিনিটে সমতা ফেরান মোরাতা। স্টেফান লিখটস্টাইনারের পাস থেকে তেভেসের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান বার্সেলোনার গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, ফিরতি বলে তাকে পরাস্ত করে জাল খুঁজে নেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার মোরাতা।
ম্যাচে সমতা ফেরার পর ছন্দপতন ঘটে বার্সেলোনার খেলায়। এই সময়ে রক্ষণ সামলাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। মেসি-সুয়ারেসের প্রচেষ্টায় বিক্ষপ্ত আক্রমণে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল তারা।
সেই চেষ্টা সফল হতে বেশি সময়ও লাগেনি। ৬৮তম মিনিটে দ্বিতীয়বার বার্সেলোনাকে এগিয়ে নেওয়ার কৃতিত্ব সুয়ারেসের। প্রায় মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে ডি-বক্সের ভেতর থেকে জোরালো শট নেন মেসি। ঝাঁপিয়ে তাকে ব্যর্থ করে দেন বুফন। কিন্তু ফিরতি বল জালে পাঠিয়ে উল্লাসে মাতেন সুয়ারেস।
তিন মিনিট পর বল জালে পাঠান নেইমার। আলবার ক্রস থেকে ব্রাজিলের এই তারকার হেড তার নিজের ডান হাতে লেগে বিভ্রান্ত করে ইউভেন্তুসের গোলরক্ষককে। তাই হ্যান্ডবলের জন্য বাতিল হয় এই গোল।
এগিয়ে যাওয়ার পর ছন্দে ফিরে বার্সেলোনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নিষ্প্রভ থাকলেও স্বরূপে ফিরেন নেইমার। তাতেই বাড়ে আক্রমণের ধার। তবে ক্ষণিকের জন্যও হাল ছাড়েনি ইতালির দলটি।
৮২তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ এসেছিল জেরার্দ পিকের সামনে। বুফনকে একা পেয়েও ওপরে মেরে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি।
এক গোলে পিছিয়ে থাকা ইউভেন্তুস মরিয়া হয়ে উঠে শেষ দিকে। এই সময়ে তাদের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে উঠেন টের স্টেগান। ৮৭, ৮৮ ও ৯১তম মিনিটে ইউভেন্তুসের তিনটি আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন বার্সেলোনার গোলরক্ষক।
যোগ করা সময়ে নেইমারের গোলে নিশ্চিত হয়ে যায় প্রথম দল হিসেবে বার্সেলোনার দ্বিতীয়বার ট্রেবল জয়। বার্সেলোনা এর আগে লা লিগা ও কোপা দেল রের শিরোপা জেতে।