খরায় চা উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১ জুন ২০১৫, ১০:২২ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি দেখে চা বাগানের উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করেছিলেন বাগান মালিকরা। কিন্তু মে থেকে তীব্র খরায় পুড়ছে চা বাগান। সম্প্রতি সিলেট অঞ্চলে কিছুটা বৃষ্টিপাত হলেও চট্টগ্রামে খরা কাটছে না। এতে এ অঞ্চলের ২২টি বাগানের চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসতে বিলম্ব হচ্ছে। গরমের তীব্রতা চলতে থাকলে চট্টগ্রামের চা বাগানগুলোয় উৎপাদন লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে সারা দেশে চা উৎপাদন পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় গড়ে প্রায় ৬২ শতাংশ কমলেও চট্টগ্রামের বাগানগুলো ছিল ব্যতিক্রম। জেলার ২২টি চা বাগানে বছরের প্রথম চার মাসে বিগত বছরের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি চা উৎপাদন হয়। বাগানগুলোয় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এপ্রিলে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৯ কেজি চা উৎপাদন হয়। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩০২ কেজি চা উৎপাদন হয়, যেখানে পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ে উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮৫ কেজি। মূলত এপ্রিলের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উৎপাদন চায়ের গড় উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে বলে বাগান মালিকরা জানান। কিন্তু এর পর মে মাসজুড়ে তীব্র খরা চলে। এ কারণে আগামী কয়েক মাসের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চা সংসদ চট্টগ্রাম ব্র্যাঞ্চের চেয়ারম্যান মমতাজুল হাসান জানান, এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ২২টি বাগানে চা উৎপাদন বিগত বছরের চেয়ে বেশি ছিল। তবে মে মাসে বৃষ্টি পায়নি বাগানগুলো। তীব্র খরার কারণে আগামীতে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। জুনের শুরুতে বৃষ্টির দেখা না মিললে ভরা মৌসুমে চা উৎপাদন প্রবৃদ্ধি কম হবে। এতে চট্টগ্রামের বার্ষিক চা উৎপাদন লক্ষ্য পূরণ নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
চট্টগ্রামের একাধিক বাগান মালিক ও চা-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত জুনে চা উৎপাদন শুরু হয়। বর্ষাকালীন মৌসুমে বাগানে নিয়মিত বিরতিতে নতুন কুঁড়ি উৎপাদন হয়। ফলে চা উৎপাদনও বাড়ে এ সময়। তবে এবার বর্ষা মৌসুমের আগে তীব্র খরার কারণে বাগানগুলোয় কুঁড়ি চয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গরমের কারণে চা বাগানে কয়েকটি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায় পুরোদমে উৎপাদন কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে।
অবশ্য সিলেট, মৌলভীবাজার, পঞ্চগড়সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মে মাসের শেষ দিকে বৃষ্টিপাতের দেখা মিলেছে। ফলে এসব অঞ্চলে চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি নেই বলে জানান তারা।
চা সংসদের তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের বাগানগুলোয় চা উৎপাদন পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ কমে। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের ২২টি বাগানে মোট ৬৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬১২ কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০১৪ সালে উৎপাদন হয় ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ কেজি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে চা উৎপাদন কমে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮২ কেজি। এ বছর চা উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও চলতি খরার কারণে বাগান মালিকরা লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
তীব্র খরার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মাইনউদ্দিন আহমেদ বলেন, তীব্র গরমে গাছের সালোক সংশ্লেষণ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কুঁড়ি তৈরি বন্ধ হওয়া ছাড়াও পাতার বিকাশ বিলম্বিত হয়। এছাড়া অনেক সময় পোকার আক্রমণে চায়ের কুঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়। সব মিলিয়ে উৎপাদন কমে যাওয়া ছাড়াও নিম্নমানের চা উৎপাদন হতে পারে।
সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কিছু বাগানে তীব্র দাবদাহের কারণে আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে বাগান মালিকরা শঙ্কিত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এক মাস ধরে বৃষ্টি হয়নি। এ অবস্থায় বাগান কর্তৃপক্ষ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রতিকার চেয়ে বার্তা পাঠিয়েছে। সম্প্রতি সিলেট অঞ্চলে কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। পরিচর্যা ধরে রাখতে পারলে গত কয়েক মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দেশের বাগানগুলো থেকে নিলামে চা সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে ভালো মানের চা সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় গত কয়েকটি নিলামে চায়ের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রামে চায়ের আন্তর্জাতিক নিলামে গড়ে ৭৫-৮০ শতাংশ চা বিক্রি হলেও সরবরাহ কম থাকায় ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত চা বিক্রি হতে দেখা গেছে।