জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১১৬ তম জন্মবার্ষিকী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০১৫, ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম হয়েছিল কবির।
কবির জন্মবার্ষিকীর দিনটি জাতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় উদযাপন করছে। এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে কুমিল্লায়। কুমিল্লার টাউনহল চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবার কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কুমিল্লায় নজরুল’। নজরুলের প্রেম বিয়ে-বিচ্ছেদ, গ্রেপ্তার, সমাবেশ এবং কাব্য ও সংস্কৃতিচর্চাসহ বহুঘটনার নিরব সাক্ষী এ শহর। এই কুমিল্লা জেলার দৌলতপুরে সৈয়দা খাতুন নামে এক কিশোরীকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। নাম রেখেছিলেন ‘নার্গিস’।
১৯২১ সালে নির্ধারিত বিয়ের দিনটিতেই তাদের বিয়ে ভেঙে যায়। নার্গিসকে নিয়ে তিনি লিখেন ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই/কেন মনে রাখো তারে’। এই শহরেই এখনো কবির অনেক স্মৃতি বহমান। নজরুলের স্ত্রী প্রমীলার বাড়িও এখানে। সেই হিসাবে কুমিল্লায় কবির জন্মবার্ষিকীর মুল অনুষ্ঠান করা এবং প্রতিপাদ্য ‘কুমিল্লায় নজরুল’ বিশেষ তাৎপর্যময়।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কুমিল্লায় ঐতিহ্যবাহী টাউনহল মাঠে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীর তিন দিনব্যাপী সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিকাল ৪ টায় টাউন হল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, নজরুল ইন্সটিউটের ট্রাস্ট্রিবোর্ড সভাপতি অধ্যাপক এমিরিটাস রফিকুল ইসলাম।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
স্বাগত বক্তব্য দিবেন,সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম আকতারী মমতাজ।
আজ সকালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল ইন্সটিটিউট আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
এছাড়াও ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল এবং চট্টগ্রামে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির ১১৬ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
বাংলা কবিতায় নজরুলের আবির্ভাব একেবারেই ধুমকেতুর মতো। হঠাৎ করে একদিন তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হয়ে সমস্ত আকাশকে কিভাবে রাঙিয়ে গেলেন অথবা উজ্জ্বল করে দিলেন তা নিয়ে এখনো গবেষণা হতে পারে। কোন সঞ্জিবনী মন্ত্রে তিনি উচ্চকন্ঠে বলতে পারেন ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’ অথবা মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-’।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণা বন্ধ হয়নি কিংবা উৎপীড়িতের ক্রন্দল রোলও কখনো থামেনি। আর সেই কারণেও নজরুল আমাদের কাছে এখনো প্রাসঙ্গিক। আসলে বিদ্রোহী কবি যেমন ছিলেন নির্ভিক, তেমনি এই প্রেমিক কবি ছিলেন রোমান্টিক।
তার অধিকাংশ গান সুরপ্রধান। বৈচিত্রপূর্ণ সুরের লহরী কাব্যকথাকে তরঙ্গায়িত করে এগিয়ে নিয়ে যায়। সুরের বিন্যাসের উপরে কথা ঢলে পড়ে। তার গানে বহু গায়ক সুর-স্বাধীনতা ভোগ করেন। অনেক ক্ষেত্রে গায়ক সুরের ঢেউয়ে বেশি মেতে যান। তখন গান হয়ে যায় রাগপ্রধান।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।