দালালদের নিয়ন্ত্রণে বড়লেখা ভূমি অফিস
দালাল-কর্মচারী মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০১৫, ৫:০০ পূর্বাহ্ণ
বড়লেখা প্রতিনিধি ::
মৌলভীবজার জেলার বড়লেখা উপজেলা ভূমি অফিস যেন ঘুষ-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কোন রাখঢাক ছাড়াই চলে ঘুষের লেনদেন। এখানে দালাল ছাড়া কোন কাজই হয় না। নড়ে না ফাইল। ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের মূল্য তালিকা সম্বলিত সাইনবোর্ড ও কাগজ সরবরাহের নির্ধারিত সময়ের উল্লেখ শুধুই লোক দেখানো। তালিকার মূল্যের ৫০/৬০ গুণ বেশি টাকা আর মাসের পর মাস পিছনে ঘুরে ভূক্তভোগীরা কাজ আদায় করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে শতগুণ বেশি টাকা দিয়েও কেউ কেউ হয়রানীর শিকার হন। এসব যেন দেখার কেউ নেই।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূমি অফিসের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের ভয়াবহ চিত্র। বড়লেখা উপজেলা ভূমি অফিসে দালালদের কাছে কোন কাজই অসাধ্য নয়। জমির বৈধ মালিক যেই হোক, চাহিদা মতো টাকা এবং দাগ খতিয়ান নম্বর দিলেই তা হয়ে যায় অন্যের। আবার বৈধ কাগজপত্র থাকা স্বত্ত্বেও ঘুষের রেটে হেরফের হলে প্রকৃত ভূমি মালিকদের হতে হয় হয়রানির শিকার। নামজারির জন্য যেখানে সরকার নির্ধারিত ফি ২৭২.৫ টাকা। সেখানে ৩৫০০-৫০০০ হাজার টাকার নিচে কোন কাজে হাতেই দেয় না কর্মচারী কিংবা দালাল। ভূমি অফিসে দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। দালাল-কর্মচারী সবাই মিলে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। এমনভাবে ঘুষের দরদাম চলে এ যেন তাদের ন্যায্য পাওনা। দাবিমতো টাকা দিলে ভূমি সংক্রান্ত নানা তদন্ত প্রতিবেদন, সার্ভে রিপোর্ট আর নামজারি খতিয়ানের মাধ্যমে গোপনে একজনের জমি রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে অন্যজনের নামে। এসব অনিয়মের বেড়াজালে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জাল দলিল, পর্চা, মৌজা ম্যাপ (নকশা), একই জমি বহু জনের কাছে বিক্রি, রেকর্ডের সময় নির্ধারিত লোকের অনুপস্থিতিতে তার জমি নিজের অংশের মধ্যে ঢোকানোসহ নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে পরিচিত ভূক্তভোগীরা। দলিলপত্র ঠিক থাকলে টাকার পরিমাণ কম হাঁকা হয়। একটু এদিক-সেদিক হলে আর রক্ষা নেই, কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলেও নিস্তার মেলে না। টাকার বিনিময়ে দুর্বলতার খবর প্রতিপক্ষের কাছে পাচার করা হচ্ছে। এমনকি র এর নিচে বিন্দু না পড়লেই টাকার অঙ্ক বেড়ে যায় কয়েক হাজার। বড়লেখা ভূমি অফিসে কর্মচারীর চেয়ে বাইরের দালালের সংখ্যা বেশি। এসব দালালরা সরকারি কর্মচারীর মতো বিভিন্ন রেকর্ডপত্র নাড়াচাড়া করে। দেখে বুঝার উপায় নেই এরা বাহিরের লোক। অভিযোগ রয়েছে এসব দালালরা বালামে ভুল ও মিথ্যা তথ্য সংযোজন করে আবার তা ঠিক করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি মালিকের নিকট থেকে হাতিয়ে নেয় হাজার হাজার টাকা।
সরেজমিন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ভূমি অফিসে কমপক্ষে ৫০ জন দালাল সক্রিয়। এরা নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে উপজেলার সকল এলাকার ভূমিসংক্রান্ত কাজকর্ম। এসব দালালদের কাছে জিম্মি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভূক্তভোগী বলেন, ভূমি অফিসের দেয়ালও যেন ঘুষ খায়। তহশিলদার ও কর্মচারীরা দিনে কত টাকা যে ঘুষ নেয় তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। ভূমি অফিসের ঘুষ দুর্নীতির বিষয় সকলেরই জানা তারপরও কোন প্রতিকার নেই। প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের এমন দৃশ্য দেখলে মনে হবে এযেন সর্ষের মধ্যে ভূত।
সূত্র জানায় ভূমি অফিসে কর্মরত (স্থানীয়) কয়েকজন কর্মচারী ঘুষ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
বড়লেখা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানান, যোগদানের পর থেকেই তিনি সরকার নির্ধারিত ফিজে নামজারীসহ অন্যান্য কাজ করে দিচ্ছেন। জনগণ যাতে হয়রানীর শিকার না হন এজন্যও তিনি বিভিন্ন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করেন। তিনি চেষ্টা করছেন ভূমি অফিসটি দালাল মুক্ত রাখার।