আজ রাজনগরের পাঁচগাঁও গণহত্যা দিবস
১৯৭১ সালের এই দিনে ৫৯ জন নিরীহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী
প্রকাশিত হয়েছে : ৭ মে ২০১৫, ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ
আব্দুর রহমান সোহেল, রাজনগর ::
আজ ৭ই মে। ঐতিহাসিক পাঁচগাঁও গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে মৌলভীবাজারের রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে পাক হায়েনারা হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল নিরিহ-নিরস্ত্র লোকজনের ওপর। সূর্যোদয়ের আগেই ঐতিহাসিক পাঁচগাঁওয়ে প্রবেশ কারে হানাদার বাহিনী একসঙ্গে দুজন করে বেঁধে ব্রাশফায়ার করে ফেলে দিয়েছিল পাশের দীঘির পানিতে। এতে প্রাণ হারান ৫৯ জন বাংলাদেশি। কিন্তু নিহতদের স্মরনে আজো সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিভিন্ন দিবসে তাদের কবরে ফুল দেয়াই সীমাবদ্ধ থাকে নিহতদের স্মরণ। নিভৃতেই চলে যায় এ দিবসটি।
ঐতিহাসিক এ গণহত্যার স্বাক্ষী পাক সেনাদের গুলির সামনে থেকে বেঁচে যাওয়া সুবুধ মালাকার (৮০)। তিনি বলেন, যখনই এ গণহত্যার কথা মনে হয় চোখের জলে ভেসে যায়। ৭১ সালের ঔ দিনে বাংলা তারিখ ছিল ২৩ শে বৈশাখ, শুক্রবার। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ৩৮-৪০ হবে। ফজরের আগেই পাক সেনাদের ৪০-৫০জনের একটি দল দুটি গাড়িতে করে স্থানীয় দুই রাজাকারকে নিয়ে গ্রামের সরকারবাজার দীঘির পাড়ে নামে। এক রাজারকার কিছু সৈন্য নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। বাড়ির ৯ জন পুরুষ সদস্যকে বের করে নিয়ে যায় দীঘির পাড়ে মিটিং করবে বলে। সবাইকে সোজা লাইনে দাঁড়ও করাচ্ছে। তখনই মনের অজান্তে মৃত্যুর ছবি ভেসে আসে। এভাবে গ্রাম থেকে প্রচুর লোকজনকে ধরে আনা হয়। এক জনের হাত আর অন্যজনের পায়ের সঙ্গে বেঁধে রাখে। জামিনি মালাকার নামে একজনের সঙ্গে আমাকে বেঁধে রাখে। শুরু হয় গুলি। আমাদেরকেও গুলি করে করে ফেলে দেয় দীঘির পানিতে। একটি গুলি আমার কান ফুঁড়ে চলে যায়। আমি দীঘির পানিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি। জ্ঞান ফিরলে দীঘির লম্বা কচুরিপানার নিচে নাক ভাসিয়ে কয়েকজন প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হই। কিন্তু জামিনি মালাকার পাক সেন্যদের গুলিতে মারা যান। হায়েনারা চলে যাওয়ার পর লোকজন আহতদের তুলে আনে। এভাবে পাষণ্ডরা একে একে পানির মধ্যে গুলি করে হত্যা করে ৫৯ জন নিরীহ অসহায় নিরস্ত্র লোকজনকে। তন্মধ্যে চরিত্র শব্দকর, সাধু শব্দকর ও কাটি শব্দ কর প্রমুখ। কয়েকজনকে ধরে নিয়ে মৌলভীবাজার চাঁদনীঘাট ব্রিজের উপর গুলি করে লাশ মনু নদীতে ফেলে দেয়।
৭১ সালের ঐদিনে স্বামী হারানো পরিবালা (৭০) বলেন, স্বামী গুলি করে হত্যার করার পর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় সৈন্যরা। আগুনে পুড়ে তিনটি গরু মারা যায়। স্থানীয় প্রসিদ্ধ রাজাকার আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ১০০ মণ ধান লুটে নেয়। আমরা প্রাণে বেঁচে গিয়েও শান্তিতে থাকতে পারিনি।
রাজনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কামান্ডর সজল কুমার চক্রবর্তী বলেন, এখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আজো এর কোন কর্যক্রম চুখে পড়েনি। তাদের স্মরণে আমাদের কোন কার্যক্রম নেয়া হয়নি।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইনুর আক্তার পান্না বলেন, এবিষয়ে গত উপজেলা মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বরাদ্দ দিলে গণকবর সংরক্ষণ ও নাম সহকারে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে।