আসামকে রেখেই সীমান্ত বিল অনুমোদন করল ভারতের মন্ত্রিসভা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫ মে ২০১৫, ৯:২৬ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা শেষ পর্যন্ত আসামকে রেখেই স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে।
বহুল আলোচিত সীমান্ত বিল অপরিবর্তিতভাবে অনুমোদন আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ভারতের মন্ত্রিসভা বিলটি অনুমোদন দেয়। করেছে। ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের জন্য ভারতীয় সংবিধান সংশোধনের এই বিলটি কাল বুধবার রাজ্যসভায় পাস করিয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার লোকসভায় পাস করানোর কথা রয়েছে।
আসাম বিজেপির পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতার মুখে চুক্তি থেকে আসামের ছিটমহলগুলো বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিবেচনা করছেন বলে এর আগে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ না দিতে মোদীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। আসামকে বাদ দিলে রাজ্যসভায় এ বিল পাসে সমর্থন দেওয়া হবে না বলে ইংগিত দেয় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
গতকাল রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর বাসভবনে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সীমান্ত বিল অপরিবর্তিতভাবে পাস করানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে আসাম বিজেপির সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যসহ দলের সব সাংসদকে ডাকা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর কাল বুধবার সীমান্ত বিলটি অপরিবর্তিতভাবে রাজ্যসভায় এবং পরদিন বৃহস্পতিবার লোকসভায় পাস হতে পারে।
ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়, বিলটি ঠিক যেভাবে রাজ্যসভায় রয়েছে, সেভাবেই পাস করানো হবে। আসামের ওপর এর যে প্রভাব পড়বে, তা বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।
আগামী ৮ মে লোকসভার চলতি অধিবেশন শেষে চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী। এরপর জুন বা জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসতে চান তিনি।
তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা ইংগিত দিয়েছেন, ‘খালি হাতে’ ঢাকা সফরে যাওয়া মোদীর ‘ঠিক হবে না’। এ কারণে লোকসভার চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস করিয়ে আনতে মোদীর এই তাড়াহুড়ো।
ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
এর আওতায় বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা।
বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেও জমি হস্তান্তরে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে। ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকার কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও বিজেপি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় রাজ্যসভা ও লোকসভায় তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়।
এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসাবে ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নেন। শুরু থেকে আপত্তি করে আসা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও নান চাপের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেন।
মোদী নিজেও বিভিন্ন সময়ে এ চুক্তি কার্যকরে জোর চেষ্টা চালানোর কথা বলেন। কিন্তু আসামে নিজের দলের ভেতর থেকেই তাকে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়।