থাইল্যান্ডের গণকবরে ১০ বাংলাদেশির মরদেহ সন্ধান
প্রকাশিত হয়েছে : ৪ মে ২০১৫, ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের সংখলা প্রদেশে আবিষ্কৃত গণকবরে অন্তত ২৬টি মরদেহের মধ্যে ১০টি বাংলাদেশির সন্ধান পাওয়া গেছে। থাইল্যান্ড ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্ট গতকাল রোববার গণকবরের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া আনুজার নামে ২৮ বছর বয়সী এক যুবকের উদ্ধৃত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে।
দুদিন আগে থাইল্যান্ডের দক্ষিণের গভীর জঙ্গল থেকে গণকবরে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের মরদেহের খোঁজ পাওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। সেখানে আরো ৩২টি গণকবরের সন্ধান মিলেছে। সংখলা প্রদেশে শুক্রবার শরণার্থীদের গণকবরের কাছ থেকে দুই বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। তারা সবাই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছে। ৩জনই অসুস্থ ছিলেন।
বাংলাদেশির নাম আনুজার (২৮)। সে নরসিংদীর বাসিন্দা। গণকবরে আরো ১০ বাংলাদেশি ও ৩০ জন রোহিঙ্গার মরদেহ আছে বলে অনুজার জানান। তারা সবাই মালেয়শিয়ার উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেছিলেন। তবে তাদের থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েকমাস ধরে বন্দি আছেন।
উদ্ধার হওয়া দুই কিশোর জানান, জঙ্গলে ক্যাম্পটি আট মাস ধরে আছে। ওইখানে কমপক্ষে ৮০০ শরণার্থী আছে। আনুজার জানান, দালালদের খপ্পরে পড়ে যারা মুক্তিপণ আদায় করতে পারেনি, তাদের ওই ক্যাম্পে বন্দি রাখা হয়েছিল। মুক্তিপণ দিতে না পারায় তারা বেঁচে আছে কি মারা গেছেন তার কোনো খোঁজ নিতো না দালালরা। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করা হতো। ক্যাম্পটির শরণার্থীদের কখনোই পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হতো না।
আনুজার আরও জানান, মোট আটজন দালাল ক্যাম্পটি নিয়ন্ত্রণ করতো। এদের মধ্যে আহমদ আলী, আনোয়ার ও সরিম-ইদাকে চিনেন। দালালরা কেউ রোহিঙ্গা, কেউ মালয়েশিয়ান।
পুলিশ জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। তাদের সবার ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে। বেশিরভাহ মরদেহ একমাস আগের। এর আগে নদীতে পাওয়া মৃতদেহ এবং সদ্য মৃত লাশও পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত পাচারকারীরা সেখানে ছিল। পুলিশের ধারণা বেশিরভাগ শরণার্থী শারীরিক নির্যাতনের কারণে মারা গেছেন। লাশগুলোর গায়ে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে প্রতিবছর বহুলোক থাইল্যান্ডের আসেন। প্রথমে তাদের সীমানার কাছাকাছি কোনো জঙ্গলে রাখা হয়। দীর্ঘ অনেকমাস অবস্থান করার পর সুযোগ বুঝে দুই-তিনজন করে শহরে পাঠান দালালরা। অনেক শরণার্থীর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। ক্যাম্পে অবস্থানরত শরণার্থীদের অসহায়ভাবে দিন কাটাতে হয়। তাদের পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও ঘুমের সুযোগ দেয়া হয় না। অনাহারে কিংবা অসুস্থ হয়ে কেউ মারা গেলে তাদের একসাথে জড়ো করে গণকবর দেয়া হয়।