সিলেট অঞ্চলের ভূমিকম্পের ইতিহাস, আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ এপ্রিল ২০১৫, ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
গত ২৫ এপ্রিল শনিবার নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতে একযোগে আঘাত হানে শক্তিশালী এই ভূমিকম্প। উৎপত্তিস্থলে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৯।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস’র তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল কাঠমাণ্ডুর অদূরে পোখরার কাছে লামজুং। এর ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এরপর পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় বিভিন্ন মাত্রার পঞ্চন্নটি কম্পন অনুভূত হয়।
মূল ভূমিকম্পের পরে গত ২৬ এপ্রিল রোববার দুপুর ১টা ১৩ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতে আবারো একটি নতুন ভূমিকম্প আঘাত হানে। ইউরোপীয়-ভূমধ্যসাগরীয় সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের (ইএমএসসি) হিসাবে রিখটার স্কেলে এ কম্পনের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫। তবে ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্য মতে, এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭।
নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে ৮৫ কিলোমিটার পূর্বে ও কোদারি থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল বলে জানিয়েছে ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে।
এরপর সোমবারও (২৭ এপ্রিল) ভূকম্পনে কেঁপে ওঠে নেপাল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্যমতে এই কম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ১।
এ নিয়ে গত তিন দিনে প্রায় ৬০টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত নেপালে।
আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা বা পদ্ধতি না থাকায় ভূমিকম্প মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতির কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে এর জন্য আগাম সতর্কমূলক ব্যবস্থা, তাৎক্ষণিক করণীয় এবং ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করতে পারে মানুষ। ভূমিকম্পের এইসব পূর্বাপর পরিস্থিতি এবং নেপালে সংঘঠিত ভয়াবহ ভূমিকম্পের বিষয়ে কথা বলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. জহির বিন আলম।
তিনি বলেন, ‘১৫৪৮ সালে আঘাত হানা ভূমিকম্পে সিলেটসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভূমিরূপের ব্যাপক পরিবর্তন হয়। এরপর ১৬৪২, ১৬৬৩, ১৮১২ ও ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পে সিলেটের মানচিত্র বদলে যায়। আর সিলেটে এ যাবৎকালের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়েছি ১৮৯৭ সালের ১২ জুন -যা ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থ কোয়াক’ নামে পরিচিত। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে সৃষ্টি হয় বিশাল আকারের পাহাড়-টিলা, হাওর, বিল ও জলাশয়।’
তিনি জানান, ১৯১৮ সালের মাঝারি আকারের একটি ভূমিকম্প হলেও দীর্ঘদিন ধরে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হয়নি। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে প্রায় ১শ’ বছর পর পর এ অঞ্চলে আঘাত হেনেছে বড় ধরনের ভূমিকম্প। সে অনুযায়ী ১৯৯৭ কিংবা এর আগে-পরে এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আর গত শনিবার নেপালের পার্বত্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ায় ওই আশঙ্কা আবারও সত্য হলো।
ড. জহির বলেন, ‘প্রকৃতিগতভাবেই ভূ-গর্ভে গ্যাস ও তেলসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সৃষ্টি হয়। আর তা থেকে উৎপন্ন এনার্জি প্রতিনিয়ত ভূ-গর্ভের বিভিন্ন প্লেটের সংযোগস্থল দিয়ে বের হতে চাপ সৃষ্টি করে। আর যখনই দু’টি প্লেটের মাঝে ফল্ট (ফাঁক) তৈরি করে এনার্জি বের হবে তখন চাপের মাত্রা অনুযায়ী কেঁপে উঠবে অঞ্চল বিশেষ। সিলেট অঞ্চল তথা বাংলাদেশ ইন্দো-বাংলা ও ইউরোশিয়ান প্লেটে অবস্থিত। এসব প্লেটে ভারত-নেপালও রয়েছে।’
শনিবার নেপালে সৃষ্ট ভূমিকম্পের কারণে ওই অঞ্চলে জমা হওয়া এনার্জি অনেকটা ক্ষয় হয়ে গেছে উল্লেখ করে ড. জহির বলেন, ‘সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ তথা সিলেটে ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা অনেকটা কেটে গেছে। তবে মৃদু আকারের ভূমিকম্প আরো হবে। কারণ এনার্জির চাপে একাধিক প্লেটের মধ্যে যে ফাঁক তৈরি হয়েছে তা ধাপে ধাপে কমে আসবে। আর সেজন্যই ধাপে ধাপে অনুভূত হবে মৃদু ভূ-কম্পন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘শিগগির উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা না থাকলেও মাত্র ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে উৎপত্তিস্থল যদি ইন্দো-বাংলা প্লেটের ডাউকি ফল্টে থাকে তবে সিলেটে প্রাণহানীসহ ব্যাপক ক্ষতি হবে। আর মাত্রা ৭-এর উপরে হলে ধ্বংসের জনপদে রূপ নেবে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ দেশের বিশাল এলাকা।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- সিলেটে নতুন করে একাধিক ফল্ট পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো খুবই সক্রিয়। সিলেট অঞ্চলের মাটির গঠন রূপও ভাল নয়।