কমলগঞ্জে ধলাই নদীর বাঁধে ফাটল, আতংকে ১৩টি গ্রামের মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০১৫, ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ
জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি গ্রামে ধলাই নদীতে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধটির ফাটল দেখা দেওয়ায় ১৩ টি গ্রামের মানুষের মধ্যে আতংক ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। নদীর পূর্ব ও পশ্চিম ভাগে বিস্তৃর্ণ পাহাড়ী অঞ্চল টিলা ভূমি, দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চা বাগান। প্রবল বৃষ্টিপাত হলেই দেখা দেয় নদী ভাঙন।
মাধবপুর ইসলামপুর ও কমলগঞ্জ পৌর এলাকার ঘুরে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজন ও ভাঙন আতংকে দিন কাটানো পরিবার গুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আদীবাসি মণিপুরী, চা শ্রমিক, অধ্যুষিত মাধবপুর ইউনিয়নের হীরামতি গ্রামের পথ ধরে ধলাই নদীর পাড় দিয়ে যাবার সময় চোখে পড়ে আধাপাকা ঘরবাড়ীর ধ্বংশাবশেষ। এগুলো ২০০৪ সালে বন্যায় নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
গ্রামের পঞ্চাষোর্ধ্ব বৃদ্ধ বদন সিংহ ও এই এলাকারই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ধীরেন কুমার সিংহ বলেন, হীরামতি গ্রামের তাদের বাড়ির সামনেই এবার নদী ভাঙনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া ব্লক ও নদীর বাঁধের অধিকাংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং এবার উজানী ঢল নামলেই আমাদের তথা আরো ১২টি গ্রামবাসীর আর রক্ষা নেই, ক্ষতির সম্মুখিন হতে হবে দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি গ্রামের কৃষিজীবীদের।
এলাকাবাসী জানান, ২০০৪ সালের সৃষ্ট বন্যা ও ভাঙনে গ্রামের দক্ষিণ পশ্চিমাংশের রাজকুমার সিংহ, তমাল সিংহ, সুশিল সিংহ, মদন সিংহ, লোকেন্দ্র সিংহ, রিনা সিনহা, চুড়ামনি সিংহ, পুতুল সিংহ, কুঞ্জ সিংহ, গৌরমনী সিংহ, ইমানু দেবীসহ ১৩/১৪ বাড়ী ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তার বাড়ীর সামনেই গেলে দেখা যায়, বাড়ির সীমানা প্রাচীর (বাঁশের বেড়া) ঘেঁষে ৮/১০ হাত দূরেই ধলাই নদীর পার ভেঙে ভেঙে নদীতে পড়ছে। তিনি ভাঙ্গন দেখিয়ে বলেন, এ বছর ধলাই আমাকে রক্ষা দেবে না। এরই মধ্যে ৫০/৬০ জন গ্রামবাসীর জটলা বেধে গেল।
এদের মধ্যে একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকার কুঞ্জ সিংহ, পূর্নচাঁদ সিংহ, আবির সিংহ ও মনোরঞ্জন সিংহ বলেন, আমরা পঞ্চম বারের মতো নদী ভাঙনের আশংকার প্রহর গুনছি। ব্যাংকার হরিমোহন ও নীলমনি সিংহ বলেন, এক সময়ের তিন কিলোমিটারের হীরামতি গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে আজ পৌনে দেড় কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।
নদী ভাঙ্গনের নিঃস্ব কয়েকটি পরিবার আজ গ্রাম ছেড়ে চা বাগানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক পরিবার গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনায় জুপড়ি ঘর বানিয়ে ভাসমানের মত জীবন যাপন করছে। তারা বলেন, হীরামতি গ্রামের ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ফাটল ও ভাঙন শুরু হওয়ায় হীরামতি, মাধবপুর চা বাগান, মাধবপুর বাজার, গকুল সিংহের গ্রাম, ছয়ছিড়ি, বাঘবাড়ী, পাঞ্জিবাড়ী, জপলারপাড়, পশ্চিম বাঘবাড়ী, গবিন্দবাড়ী, শুকুরউল্লারগাঁও, শিমুলতলা, ধলাইপাড় এলাকার লোকজন চরম আতংক ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। বদন সিংহের বাড়ীর নিকটে নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী আরো কয়েক গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়ে ১২/১৪টি গ্রাম কমলগঞ্জ পৌরসভার কিয়দ্বংশ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সরকারের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন সময় ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত উক্ত স্থানের জন্য কোন রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না। মাধবপুর ইউনিয়নের মণিপুরী অধ্যুষিত হীরামতি গ্রাম সহ পাশ্ববর্তী এলাকাকে ধলাই নদী করাল গ্রাস হতে রক্ষা করতে ভাঙা অংশে সি সি ব্লকের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে একসময়ে এই হীরামতি গ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রব বলেন, বর্তমানে আমাদের হাতে কোন বরাদ্দ নেই। তবে বেশি সমস্যা হলে সরেজমিন তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জরুকি ভিত্তিতে সাময়িকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।