কাউয়াদিঘি হাওর হাসছে ধান কাটার উৎসবে
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ এপ্রিল ২০১৫, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘি হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান এখন মাঠে মাঠে। ধান কাটা শুরু হয়েছে সপ্তাখানেক আগেই। গ্রামের কিষাণ-কিষাণীদের এখন ব্যস্ত সময় কাটছে। তাদের দম ফেলার সময় নেই। ধান কাটার ধুম পড়েছে। হাওর এলাকায় সর্বত্রই ধান কাটার আমেজ। কৃষকরা ধান কাটছে। মাড়াই দিচ্ছে। এ যেন এক মহোৎসব এ অঞ্চলের কৃষকদের।
তবে জেলার রাজনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকের আনন্দ যেন হঠাৎ থমকে গেছে। সপ্তাখানেক আগে শিলাবৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে।তাদের আনন্দ। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপরও কৃষকরা যে ভাবেই পারছেন ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র সম্পদ হাওর। এখানকার মানুষের নির্ভরশীলতা হাওরের ফসলের উপর। সারা বছরের খোরাকী এবং সকল ব্যয় চলে ধান দিয়ে। কৃষকরা ধার দেনাও মিটান ধান বিক্রি করে।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এবার জেলার ৯টি উপজেলায় ৫০ হাজার ৮ শ’ ৮৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ফলানো হয়েছে।
সদর উপজেলার একাটুনা ইউপি’র বুড়িকোনা বর্গাচাষী কিরণ বিশ্বাস বলেন, তিনি ২৫ কিয়া জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি সাড়ে তিনশ মণ ধান পাবো।
কিরণ বিশ্বান আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বজি, সারের কোন সহযোগিতা পাইনি। কৃষিব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করলে ছোট কৃষকদের অনেক সুবিধা হতো। সহজ শর্তে ঋণ না পাওয়ায় আমাদের এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ ও কামলা খরচ নির্বাহ করতে আমাদের কাঁচা ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
রাজনগর উপজেলার মহলাবাজর গ্রামের আরেক ক্ষুদ্র কৃষক মিজাজ মিয়া বলেন, ৪/৫ দিন আগে ধান কাটা শুরু। ধান কাটার শ্রমিকের অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে এবং ঘরে তুলতে ব্যাঘাত ঘটছে। ধান পরিবহনের জন্য ভাল কোনো রাস্তা না থাকায় ধান মাড়াই করে ঘরে পৌঁছাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয়ও খুব বেড়ে যাচ্ছে।
আকাশের অবস্থা প্রতিদিন খারাপ। বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়ার ঠিক-ঠিকানা না থাকায় ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত দুশ্চিন্তা থেকে যায়।
সদর উপজেলার বড়কাপনের কৃষক মুজিবর রহমান (৪৫) বলেন, ৪ কিয়া জমিতে ধান চাষ করেছি। আশা করছি ৫৫ মণ ধান পাব। এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের ন্যায্যমূল্য না থাকায় দুশ্চিন্তায় আছি। সার, বীজ, কটিনাশকের দাম গতবারে চেয়ে বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। অনেক কৃষকেই এবার ধান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা এনে জমিতে ধান লগিয়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না থাকার কারণে বেশির ভাগ ধানই তাদের দিয়ে দিতে হচ্ছে।
আগামী কয়েকটা দিন আবহাওয়া ভাল থাকলে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। কয়েক দিন ধরে হাওরে ধান কাটাছেন কৃষকরা। হাওরে ধান কাটা শুরু হওয়াতে সর্বত্র আনন্দ বিরাজ করছে। বৈশাখী ধান কাটা শুরু হলে বাজারে চালের দামও কমে। চালের দাম কমলে গরীবের মাঝে দেখা দেয় স্বস্তি।
এবার গত তিন চার বছরের তুলনায় ভাল ফলন হয়েছে। বোরোধানের বাম্পার ফলন আশীর্বাদ হিসেবেই দেখেছে হাওরবাসী। তবে ধানের দর কম হওয়ায় কৃষকরা কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। সরকার ধানের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ না করে দিলে কৃষকের পথে বসতে হবে। এছাড়া কৃষকরা সরকারের কাছে সহজ শর্তে ঋণেরও দাবি করছেন। হাওর থেকে ধান কেটে সহজে ঘরে আনতে রাস্তার উন্নয়ণের কথা বলেছেন। রাস্তা ভাল না হওয়ায় ধান পরিবহনে তাদের ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে বলে তারা জানান।