একাত্তরের এই দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল দেশ স্বাধীন করার শপথ
আজ ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ৪ এপ্রিল ২০১৫, ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
আজ ৪ এপ্রিল। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক একটি দিন। একাত্তরের এই দিনে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগান ব্যবস্থাপকের বাংলোয় দেশকে স্বাধীন করার শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মেজর খালেদ মোশাররফ, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান আশ্রব আলীকে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত যাওয়ার মতো একটি রাস্তা করার নির্দেশ দিলে চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে জঙ্গল কেটে সড়ক তৈরি করা হয়। ২ এপ্রিল কর্নেল এমএজি ওসমানী প্রথম সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলায় পৌঁছেন। ওইদিন বিকেলে ভারতীয় বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যাটালিয়ন কমান্ড্যান্ট পান্ডেকে তেলিয়াপাড়া হেড কোয়ার্টারে পাঠান। তিনি তেলিয়াপাড়া পৌঁছে লে. কর্নেল এমএম রেজা, মেজর শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশারফ ও মেজর সাফায়েত জামিলসহ আরো কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
৪ এপ্রিল সকালে ১টি জিপ ড্রাইভারসহ আশরাব আলীকে একজন সৈনিক দিয়ে ভারতে পাঠানো হয়। সেখানকার সিদাই থানা থেকে এমএজি ওসমানীকে নিয়ে আসার জন্য বিকেলে এসে মাগরিবের নামাজের পর ওসমানী তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বড় বাংলোর ২য় তলায় ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকেই পুরো রণাঙ্গনকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করেন বঙ্গবীর আতাউল গণি ওসমানী।
বৈঠকে রাজনৈতিক আন্দোলন জোরদার, স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার ওপর গুরত্বারোপ করা হয়। যুদ্ধের রণনীতি রণকৌশল ম্যাপ রচনা করা হয়।
ওই দিনের ঐতিহাসিক বৈঠকে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, সাবেক এমপি মাওলানা আসাদ আলী, কমান্ড্যাট মানিক চৌধুরী, তৎকালীন ছাত্রনেতা শাহ মো. মুসলিম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী পাঠানসহ অনেক স্থানীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে মুক্তিবাহিনীকে প্রথমে মুক্তি ফৌজ হিসাবে নামকরণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে তা মুক্তিবাহিনী নামে আত্মপ্রকাশ করে।
১ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগানকে নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে টার্গেট করে বাঙালি সেনাবাহিনী ২য় ও ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্ট হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে এখানে।
তেলিয়াপাড়ার এ বাংলো থেকেই ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানি নিজের পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন।
ওয়্যারলেসে পাকবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ও গোপন তথ্য পাঠানোর অভিযোগে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের তৎকালীন ব্যবস্থাপক বিহারী জরিপ খানকে আটক করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মালেক মধু জানান, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্থানটির স্মৃতি সংরক্ষণে যুদ্ধকালীন সময়ের সেক্টর কমান্ডার কাজী মো. শফিউল্যাহ বীর উত্তম পিএসসি উদ্যোগ নিয়ে ১৯৭৫ সালের জুন মাসে তেলিয়াপাড়ায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। ন্যাশনাল টি কোম্পানির তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপকের বাংলোর পূর্ব দক্ষিণে বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধ ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্মৃতিসৌধে স্থান পেয়েছে কবি শামসুর রহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি ।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি এখানে একটি মিউজিয়াম গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করার।