বৃটেনের নির্বাচনে ১০ বাংলাদেশি
প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০১৫, ১১:২০ পূর্বাহ্ণ
পূর্বদিক ডেস্ক ::
বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্রিটেন। বৃটেনের অর্থনীতিতে অবদান বাড়ছে বাংলাদেশি কমিউনিটির। সেই সাথে দেশটির মূলধারার রাজনীতিতেও এগিয়ে আসছে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা।
আগামী ৭ মে অনুষ্ঠেয় ব্রিটেনের ৫৬তম সাধারণ (হাউস অব কমন্স) নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দশ জন বাংলাদেশি। যাদের মধ্যে রয়েছেন ৫ জন নারী। এবারই সবচে বেশী সংখ্যক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও তাদের কোয়ালিশন শরিক লিবারেল ডেমোক্রেট (লিব-ডেম) এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির টিকিটে কমপক্ষে আট বাংলাদেশি নামছেন সরাসরি নির্বাচনী লড়াইয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ছয় বাংলাদেশি মনোনয়ন পেয়েছেন লেবার পার্টির। মূলত লেবার পর্টির অভিবাসীবান্ধব নীতির কারণেই বাংলাদেশিসহ এশীয় ও আফ্রিকানদের বেশি সমর্থন এ দলটির প্রতি।
গতকাল ৩০ মার্চ ব্রিটেনে বর্তমান পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এবারের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদান ও প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৭ মে পার্লামেন্টের পাশাপাশি ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ এলাকায় হবে স্থানীয় নির্বাচনও। মোট প্রায় সোয়া ৪ কোটি ভোটার এবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে রুশনারা আলী এমপি- মনোনয়ন পেয়েছেন বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউ আসনে। ব্রিটেনের এবারের সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রুশনারা আলী। সিলেটের মেয়ে রুশনারা মাত্র ৭ বছর বয়সে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। অক্সফোর্ডের সেইন্ট জনস কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করে যোগ দেন রাজনীতিতে। ১৯৯৭ থেকে ‘৯৯ পর্যন্ত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউর এমপি ওনা কিংয়ের পার্লামেন্টারি সহকারী ছিলেন তিনি। ২০০০-২০০১ সালে ব্রিটিশ ফরেন অফিসে মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করেন। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউ আসনে ২০১০ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে প্রথম বাঙালি মুসলমান এমপি হন তিনি।
বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক- হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড ফিলবার্ন আসন। টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে এই নির্বাচনী এলাকার রিজেন্টস পার্কের কাউন্সিলর।
টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক মাত্র ১৬ বছর বয়সে যোগ দেন লেবার পার্টিতে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, গ্রেটার লন্ডন অথরিটিসহ বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেছেন তিনি। এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টির নেতা হওয়ার লড়াইয়ে প্রচার চালিয়েছেন টিউলিপ। ২০১০ সালে টিউলিপ ক্যামডন কাউন্সিলে প্রথম বাঙালি প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। আসন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে তাকে হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে মনোনয়ন দেয়। একই বছর টিউলিপ ১০০ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইনসপিরেশনের মধ্যে অন্যতম হিসেবে মনোনীত হন। বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকা গত বছর তাকে আখ্যায়িত করে ‘ওয়ান টু ওয়াচ’ ইন ব্রিটিশ পলিটিক্স।
পূর্ব লন্ডনের বেথনাল অ্যান্ড বাউ আসনের পর টিউলিপের এ আসনটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাঙালি অধ্যুষিত। সেজন্য এই আসনে টিউলিপকে ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত একজন বাংলাদেশিকেই প্রার্থী হিসেবে বেছে নিতে পারে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি। ৩৮ বছর বয়সী এই বাংলাদেশির নাম শাহীন আহমেদ, পেশায় মিনিক্যাব চালক। যদি তা-ই হয় তাহলে এবারের ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে বাংলাদেশি প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়াবে ৯-এ।
এ ছাড়া লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কিংসটন ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার ড. রূপা আশা হক- ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকশন আসন। ড. রূপা হক একজন লেখক, কলামিস্ট এবং লেবার পার্টির কর্মী। তিনি লন্ডনের ইলিংবরার সাবেক ডেপুটি মেয়র। এ ছাড়া উইলইন হ্যাটফিল্ড আসনে লেবার পার্টির মনোনীত বাংলাদেশি প্রার্থী আনোয়ার বাবুল মিয়া। একটি ব্রিটিশ বিনিয়োগ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। জন্ম সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। লেবার পার্টির আরেক বাংলাদেশি প্রার্থী ব্যারিস্টার মেরিনা আহমদ- বৃহত্তর লন্ডনের বেকেনহ্যাম আসন। অ্যামনেস্টি বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেরিনা ৩০ বছর ধরে লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত।
এ ছাড়া লেবার পার্টির আরেক বাংলাদেশি প্রার্থী আলী আখলাকুল ইসলাম- লুটন আসন। সেই ষাটের দশকে তার পরিবার ব্রিটেনে বসবাস শুরু করে। আলী আখলাকুল কাজ করেছেন রেস্টুরেন্টে। ব্যবস্থাপনায় রয়েছে তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি (রক্ষণশীল দল) থেকে এবার মাত্র একজন বাংলাদেশি মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি হচ্ছেন মিনা সাবেরা রহমান- বার্কিং আসন। সুনামগঞ্জের ছাতকে জন্মের ২১ দিনের মাথায় বাবা আলহাজ আবদুল গনি ও মা রাবেয়া বেগমের কোলে চড়ে সেই সত্তরের দশকে যান লন্ডনে। থাকেন বার্মিংহ্যামে। এ ছাড়া লিব-ডেম থেকে বাংলাদেশি প্রিন্স সাদিক চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন নর্দহ্যাম্পটন দক্ষিণ আসনে।
তরুণ ব্যবসায়ী ফয়সল চৌধুরী ব্যবসার পাশাপাশি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা এবং লোথিয়ানা রেইস ইক্যুয়ালিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পর পর তিনবার তিনি এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন। ফয়সল চৌধুরী ২০০৪ সালে তার সামাজিক অর্থনৈতিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে এমবিই খেতাব লাভ করেন। স্কটিশ লেবার দল থেকে প্রথমবারের মত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বদরদি গ্রামে। ৭ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সাথে বৃটেনে আসেন।
সিলেটের বাগবাড়ীতে জন্ম প্রিন্স সাদিক চৌধুরীর, গ্রামের বাড়ী সুনামগঞ্জের ছাতকে। ১৯৭১ সালে তিনি বাবা-মার সাথে বৃটেনে যান। পরে নর্থহ্যামটন শায়ার এ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বর্তমানে ব্যবসা করছেন। দীর্ঘদিন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটের রাজনীতি ও নর্থহ্যামটন বাংলাদেশি এসোসিয়েশনের সাথে জড়িত। ২০০৭ সালে লিবারেল ডেমোক্রেট (লিবডেম) থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এই প্রথম কোনো এশিয়ান নর্থহ্যামটন থেকে এমপি পদে মনোনয়ন পেলেন।
আশুক আহমদ দীর্ঘ ৩৫ বছর লুটন শহরের বাসিন্দা। ক্ষমতাসীন লিবডেম দলের হলে লুটন সাউথ আসনের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন তিনি। আশুক আহমদ ২০০৯ সালে বৃটিশ রানী কর্তৃক ‘এমবিই’ খেতাবে ভূষিত হন। প্রায় ৬০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকা লুটনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে কোনো এমপি এখনো পর্যন্ত নেই। তিনি ক্রাইম স্টপার ইউকে ও ইনডিপেনডেন্ট পুলিশ কমিশনের একজন সদস্য। বাংলাদেশে সিলেটের বিয়ানীবাজারে তার বাড়ি।